ছেলের কাপড় আর নাতনির খেলনা হাতড়েই জীবন কাটছে প্রিয়কের মায়ের
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজারের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষেই দৃষ্টিনন্দন দোতলা বাড়ি। বাড়িটি ঘিরে এক সময় প্রাণের সঞ্চার থাকলেও এখন শুধুই সুনসান নীরবতা। বাড়িটি জনাকীর্ণ এলাকায় হলেও নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় ছেলে ও নাতনির মৃত্যু পর তাদের স্মৃতি বুকে জড়িয়ে একাকী বাস করছেন প্রিয়কের মা। বৃদ্ধ বয়সে হারানো স্মৃতিগুলোই তাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও তার একমাত্র সন্তান প্রিয়ংময়ী তামাররা। ফারুকের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানী অন্যের ঘরে সংসারী হলেও নিজ সন্তান ও নাতনির স্মৃতি বুকে আগলে রেখেছেন পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য ফিরোজা বেগম।
প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগম জানান, প্রিয়কের ইচ্ছা ছিল খুব সুন্দর একটি মসজিদ নির্মাণ করবে। মসজিদের পাশেই থাকবে মাদরাসা ও এতিমখানা। এখন প্রিয়ক নেই, তাই ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই তার শেষ বয়সের একমাত্র ইচ্ছা।
তিনি জানান, মসজিদের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে এক তলা সম্পন্ন হয়েছে, ভেতরে সাজ সজ্জার কাজ চলছে। আগামী রমজানে মসজিদে নামাজ শুরু হবে। স্বামী, সন্তান, নাতনি ও নিজের নামেই মসজিদের নামকরণ হবে। পাশাপাশি মাদরাসা ও এতিমখানা নির্মাণের কাজও চলবে।
তিনি আরও জানান, ছেলে-নাতনীর মৃত্যুর পর তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলের বউকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন। এর আগে প্রিয়কের বাবার রেখে যাওয়া সকল সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়কের স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আরও কিছু ভাগ বাটোয়ারা বাকি আছে।
ফিরোজা বেগম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তার স্বামী মারা গেছেন বেশ ক’বছর আগে। একমাত্র সন্তান প্রিয়কই ছিল তার বেঁচে থাকার অবলম্বন। সে চলে গিয়ে শূন্য করে দিয়ে গেল সব। তার পরিবারে এখন কেউ না থাকায় পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের ঘিরেই সময় কাটে। অবসরে ছেলে ও নাতনির কথা শুধু মনে পড়ে। তাদের রেখে যাওয়া স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি। নাতনির খেলনা, ছেলের পোশাক, ক্যামেরা, দেয়াল জুড়ে লাগানো ছবিই বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগাচ্ছে।
শিহাব খান/এফএ/এমকেএইচ