ঋণের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও লেখাপড়া অনিশ্চিত শরীফুলের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ০২:০৯ পিএম, ১১ মার্চ ২০২০

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর রঙ মিস্ত্রীর সন্তান শরীফুল ইসলাম। পরিবারের অভাব অনটনের মাঝেও অষ্টম শ্রেণি থেকে টিউশনি করে পড়াশুনা চালিয়েছে। টিউশনির টাকায় পড়াশুনা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দিনমজুর বাবার পক্ষে এত টাকা দিয়ে পড়াশোনা করানোর সামর্থ নেই। তাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শরীফুলের পড়াশুনা।

জানা গেছে, শরীফুল ইসলাম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের উত্তর সিংগীমারী গ্রামের ক্লিনিক পাড়ার রঙ মিস্ত্রী জমির উদ্দিন ও শরীফা বেগমের ছেলে। এক বোন এক ভাইয়ের মধ্যে শরীফুল বড়। জায়গা জমি বলতে বাড়ির ৫ শতক ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই তাদের। দিনমজুরীর টাকায় সংসার চলে পরিবারটির।

শরীফুল হাতীবান্ধা উপজেলার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৫০ ও সরকারি হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইসএসসিতে জিপিএ ৪.০৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরিবারে অভাব অনটনের মাঝে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে সকলেই অভিভূত হয়ে যান। তার ছোট বোন জেমি আক্তার স্থানীয় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

Soriful

শরীফুল ইসলাম এসএসসিতে বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও অর্থের অভাবে এইসএসসিতে মানবিক শাখায় পড়তে হয়েছে। প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ে পড়াশুনার সুযোগ হয়নি। টিউশনির টাকায় পড়াশুনা চালাতে হয়েছে তাকে। সে পড়াশুনার সুযোগ পেলে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

শরীফুল বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ‘ডি’ ইউনিটে ১৭৫২তম স্থান লাভ করে সে।

শরীফুল ইসলাম জানায়, অর্থ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা খুবই কষ্টকর। পড়াশুনার খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। বর্তমানে পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে তার। কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা তার পড়াশুনার খরচ বহন করলে পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে পারত।

শরীফুলের মা শরীফা বেগম বলেন, এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। এখন তার পড়াশুনার খরচ চালাতে পারছি না।

বাবা জমির উদ্দিন বলেন, অভাবের সংসারে ছেলে মেয়ের ইচ্ছা পড়াশুনা করার। কিন্তু আমার সামর্থ নেই। দিনমুজরীর টাকায় ঠিকমতো সংসার চলে না। কেউ যদি আমার ছেলের পড়াশুনা করানোর ব্যবস্থা করেন তাহলে আমার ছেলের ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতো। তা না হলে তার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমজি মোস্তফা বলেন, শরীফুল ইসলাম অদম্য মেধাবী। তবে সে গরিব। তার পড়াশুনার খরচ কেউ বহন করলে সে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।

রবিউল হাসান/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।