১২ কোটি টাকার রাস্তা ৬ মাসেই শেষ, চার মাসেও হয়নি সংস্কার
পাবনায় সাড়ে ১২ কোটি ব্যয়ে নির্মিত ছয় কিলোমিটার সড়ক ছয় মাসের মাথায় ধসে পড়লেও গত চার মাসে সংস্কার করা হয়নি। ফলে জনসাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হয় প্রতিদিন।
এদিকে ধসে পড়া সড়কটি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের টাকায় সংস্কার হবে নাকি সরকারের আরও অর্থ গচ্চা দিয়ে সংস্কার হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছে এলজিইডির তিনটি তদন্ত দল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পারফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ি গ্রাম পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অর্থায়নে নির্মিত ছয় হাজার ৩৯০ মিটার সড়ক সড়কটি গত বছরের জুন মাসে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু নির্মাণের ছয় মাস পার না হতেই ধসে পড়ে সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের কার্পেটিংসহ বেশিরভাগ। সেই সঙ্গে সড়কের আরও কিছু অংশে ফাটল ধরে। এ অবস্থায় সড়কটিতে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাসহ দুই চাকার কিছু যান চলাচল করছে। দ্রুত সংস্কারের পদক্ষেপ না নিলে সড়কের বাকি অংশ যেকোনো সময় ধসে পড়বে। পুরো অংশ ধসে গেলে হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফরিদপুর উপজেলা অফিস ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলার পারফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ি গ্রাম পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৯০ মিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে।প্রথম পর্যায়ে নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটি পায় রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল। কিন্তু তিনি কাজটি নিজে না করে বিক্রি করে দেন পাবনার স্থানীয় এক ঠিকাদারের কাছে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে কাজ শুরু হয়।
এরপর ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর উপজেলা প্রকৌশল অফিস মূল ঠিকাদার আব্দুল আওয়ালকে কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেন। পরে আব্দুল আওয়াল নিজেই কাজ শুরু করেন। এ সময় ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশল অফিস কাজটির জন্য বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেন। চলতি বছরের জুন মাসে সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হয়।
স্থানীয়রা জানায়, নির্মাণকাজ চলাকালীন সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে। সেসময় ঠিকাদার দায়সারাভাবে ফাটল ধরা স্থানগুলো সংস্কার করেন। ভালোভাবে কাজ করতে বললেও শোনেননি ঠিকাদার। ঠিকমতো কাজ না করায় এখন পুরো সড়কে ধস নেমেছে। সড়ক নির্মাণে ব্লক ও জলকপাট নির্মাণে অনিয়মের কারণে সড়কের এই বেহাল দশা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছয় কিলোমিটার সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক দেওভোগ গ্রামের খালের ভেতরের এক পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। খালের ভেতরের সড়ক নির্মাণের অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তবে বালুর ওপর অল্প কিছু মাটিও ব্যবহার করা হয়েছে। সড়কের ধসে পড়া অংশ ঠেকাতে খালের নিচে থেকে কার্পেটিং পর্যন্ত আরসিসি ব্লক দেয়া হয়েছে। এসব ব্লক বসানো হয়েছে এলোমেলো ও দায়সারাভাবে। ফলে বৃষ্টিতে ব্লকের জোড়া দিয়ে পানি প্রবেশ করে সড়কের বালু ধুয়ে যায়। পাশাপাশি ব্লকের মূল ভিত্তিতে খালের মধ্য জলকপাট নির্মাণের কথা থাকলেও পানি প্রবাহের কারণে অনেক স্থানেই তা নির্মাণ সম্ভব হয়নি। আর কিছু জায়গায় জলকপাট নির্মাণ করা হলেও শুরু থেকেই তা হেলে পড়েছিল। এ অবস্থায় জলকপাট ও ব্লকসহ সড়ক ধসে পড়ে।
বিএলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সড়ক ছয় মাস পার না হতেই ধসে পড়ায় আমরা খুবই হতাশ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সড়কের বাকি অংশও যেকোনো সময় ধসে পড়বে।
সড়ক নির্মাণকাজের তদারকি কর্মকর্তা ফরিদপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসলাম আলী বলেন, ঠিকাদারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়কটি পুনরায় মেরামত করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। সড়ক নির্মাণকাজের মান খুব ভালো ছিল। কিন্তু চলতি বছর বন্যার পানি চলে আসার কারণে শেষ মুহূর্তে কিছু কাজ তড়িঘড়ি করে করা হয়। এতে সড়ক ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে সমস্যা হবে না। ঠিকাদারের পর্যাপ্ত টাকা সিকিউরিটি হিসেবে অফিসে জমা আছে। তার নিজ দায়িত্বেই পুনরায় সড়ক মেরামত করে দিতে হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. বাকি বিল্লাহ বলেন, কাজটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সম্পন্ন করা হয়েছে। তারা কঠোরভাবে কাজ বুঝে নেয়। কাজেই ঠিকাদার বা উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ অনিয়ম করেছে তা বলা যাবে না। বর্ষার পানি এবং পুকুরে মাছ চাষ করার করণে ধসে পড়েছে সড়ক। তবে ঠিকাদারকে কাজটি মেরামত করে দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সড়কটি ধসে পড়ার পর এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ তিনটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা প্রতিবেদন দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে সংস্কার বা নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের টাকায় নাকি সরকারের আরও অর্থ গচ্চা দিয়ে মেরামত করা হবে সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি প্রকৌশলী মো. বাকি বিল্লাহ। তিনি বলেন, যেহেতু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়েছে কাজেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তারা। তবে ঠিকাদারের পর্যাপ্ত সিকিউরিটি মানি আমাদের কাছে এখনও জমা আছে।
একে জামান/এএম/জেআইএম