সাদা শাড়িতে বউ-শাশুড়ি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১০:০৯ পিএম, ০৪ মার্চ ২০২০

একদিন আগেও যাদের পরনে ছিল রঙিন শাড়ি, মুখে ছিল হাসি আর চোখে ছিল উচ্ছ্বাস। যারা বাড়িজুড়ে ছুটে বেড়াতেন স্বজনরা। সে বাড়িতে একদিনের ব্যবধানে বউ-শাশুড়িকে পরতে হলো সাদা শাড়ি। হাসি লুকিয়েছে কান্নার আড়ালে। দুই চোখ বেয়ে নামছে পানি। স্বজন হারানোর বেদনায় বুক ভারি। প্রাণচাঞ্চল্য বাড়িজুড়ে আজ শোকের মাতম।

ঘটনার একদিন পর বুধবার (০৪ মার্চ) দুপুরে বিজিবির গুলিতে দুই ছেলেসহ নিহত সাহাব মিয়ার বাড়িতে গেলে এমন দৃশ্য দেখা যায়। মাথার ওপর ছাতার মতো থাকা বাবা আর দুই ভাইকে হারিয়ে বিলাপ করছে সাহাব মিয়ার চার মেয়ে মোরশেদা বেগম, আলেয়া বেগম, জুলেখা বেগম ও নিফুলা বেগম। তাদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছেন আকবর আলীর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে আমেনা আক্তার। অন্যদিকে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে আছে আহাম্মদ আলীর পাঁচ মাস বয়সী শিশুকন্যা আনিছা ও আকবর আলীর ছয় মাসের শিশুকন্যা মায়া।

স্বামী ও দুই সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় রঞ্জু বেগম। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই স্বামী আর সন্তান হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করে বসলেন তিনি। বললেন, বিজিবি সামনে থেকে গুলি করে আমার স্বামী আর দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। স্বামী-ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার আগে আমার কেন মরণ হলো না। পাঁচজন মানুষ মারা গেল, কি অপরাধ ছিল তাদের।

‘আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব। আমার দুই পুত্রবধূর কি হবে। যে বয়সে লাল শাড়ি পরে আনন্দ করার কথা সে বয়সে কোন অপরাধে তাদেরকে সাদা শাড়ি পরতে হল? কি হবে আমার নাবালক নাতনিদের? আমার ভাঙা ঘরে কে আলো জ্বালাবে?’ বলতে বলতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্বামী-সন্তানহারা রঞ্জু বেগম।

এ সময় সেখানে উপস্থিত স্বজনরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনরা বলেন, পরিবারের তিন সদস্য সাহাব মিয়া, আকবর আলী ও আহমদ আলীর মৃত্যুর পর আমাদের ঘরে আলো জ্বালানোর মতো আর কেউ রইল না। বাবা ও দুই ছেলের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না আমরা। বউ-শাশুড়ির পরনে কোন অপরাধে সাদা শাড়ি উঠল তা জানতে চাই আমরা।

মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) নিজের বাগানের গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে মাটিরাঙ্গার গাজিনগরে বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিজিবি গুলি করলে ঘটনাস্থলেই সাহাব মিয়া ও তার ছেলে মো. আকবর আলী নিহত হন।

সেই সঙ্গে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন, স্থানীয় আহাম্মদ আলী, মফিজ মিয়া এবং মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মারা যান বিজিবি সদস্য শাওন ও আহাম্মদ আলী। নিহত আহাম্মদ আলী সাহাব মিয়ার ছেলে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান মো. মফিজ মিয়া। এ নিয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

বুধবার (০৪ মার্চ) দুই দফা জানাজা শেষে মো. মফিজ মিয়াকে বটতলী কবরস্থানে এবং সাহাব মিয়া ও তার দুই ছেলে আকবর আলী ও আহাম্মদ আলীকে ইসলামপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।