শিকলমুক্ত করে ফাহিমার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ইউএনও
অবশেষে শিকলমুক্ত করে ফাহিমার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফাহিমার বাড়ি যান ইউএনও রায়হান। এ সময় ফাহিমার ডান পায়ে লাগানো ১০-১২ ফুট লম্বা শিকল খুলে ফেলার নির্দেশ দেন তিনি। পরে ফাহিমা এবং তার পরিবারের খোঁজখবর নেন। এরপর ফাহিমার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন ইউএনও। পাশাপাশি ফাহিমার পরিবারকে ব্যক্তিগতভাবে এবং সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ইউএনও এ ডব্লিউ এম রায়হান বলেন, গণমাধ্যমে খবর দেখে ফাহিমার বাড়ি যাই। পরে তাকে শিকলমুক্ত করি। ফাহিমাকে দেখে এবং তার কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে সুচিকিৎসা পেলে ভালো হয়ে যাবে। তার চিকিৎসার বিষয়ে পাবনার একজন ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেছি। দু-একদিনের মধ্যে আমাকে খবর দেবেন তিনি। ফাহিমার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ আমি বহন করব। পাশাপাশি তার পরিবারকে সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করব।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তিন মাস ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটছে ফাহিমার। এইচএসসি পরীক্ষায় বহিষ্কার হওয়ার পর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি। বর্তমানে তিনি পাগলপ্রায়। ফাহিমা কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বুরুজের পাড় গ্রামের মৃত নুরুজ্জামানের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন ফাহিমা। একসময় সবার সঙ্গে হেসে-খেলে মেতে থাকতেন। সবার মতো বিদ্যালয়ে যেতেন। ১৯৯৬ সালে অংশ নেন দাখিল পরীক্ষায়। দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন তিনি। এরই মধ্যে বাবা নুরুজ্জামান হঠাৎ প্যারালাইজড হয়ে যান। শুরু হয় সংসারে অভাব। তখন সংসার বাঁচাতে ফাহিমা পাড়ি জমান চট্টগ্রাম। চাকরি পান পোশাক কারখানায়।
কিন্তু পড়ালেখার আগ্রহ তাকে সবসময় টানত। তারপর ভর্তি হন উচ্চ মাধ্যমিকে। ফাইনাল পরীক্ষায়ও অংশ নেন। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। তখন থেকে ভেঙে পড়েন ফাহিমা। একদিন গভীর রাতে কী যেন ভেবে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠেন। তখনই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন ইউএনও এ ডব্লিউ এম রায়হান।
নাজমুল/এএম/জেআইএম