কুড়িগ্রামে ইউনিয়ন জাপার সভাপতিকে শ্বাসরোধে হত্যা


প্রকাশিত: ১২:৪২ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০১৫

কুড়িগ্রামের কচাকাটা পুলিশ থানার বল্লভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি আতিকুর রহমান রাজাকে (৪০) হাত পায়ের রগ কেটে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

নিহতের বাবার নাম আজিজার রহমান। নিহত আতিকুর রহমান রাজা কুড়িগ্রাম-১ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকের খালাতো ভাই।

এদিকে, রাজার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থকরা একত্রিত হয়ে প্রতিপক্ষের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী থানা এবং কুড়িগ্রাম থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।

পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে ঘটনাস্থল থেকে ২ নারীসহ ৩জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বিক্ষুব্ধদের দেয়া আগুনে বিএনপি নেতা আব্দুল জলিলসহ ৬টি বাড়ি ভস্মিভূত হয়েছে।

নিহতের ছোট ভাই প্রভাষক আজিজুল ইসলাম রানা জানায়, বুধবার রাত ১২টার দিকে মাদারগঞ্জ বকুলতলা নামক স্থানে দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। আতিকুর রহমান রাজা বুধবার সন্ধ্যায় হাজীপুর এলাকায় ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়। ওয়াজ মাহফিল শেষে রাতে মোটরসাইকেলযোগে বন্ধু আলতাফ হোসেনসহ বাড়ি ফিরছিলেন।

রাত ১২টার দিকে মাদারগঞ্জ বকুলতলা হাজীপাড়া গ্রামের জোড়া দীঘির পাড়ে পৌঁছালে কয়েকজন মুখ ঢাকা দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে এবং ধারালো চা পাতি দিয়ে এলোপাথারি কোপে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার হাত, পায়ের রগ কেটে ও শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

এ সময় মোটরসাইকেলসহ বন্ধু আলতাফ হোসেন পালিয়ে যায়। প্রভাষক রানা দাবি করেন, পূর্ব শক্রতার জের ধরে বিএনপি নেতা ও প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের ছেলে রবিন, লাভলু ও লাবিন এ হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন। এদিকে খবরটি এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ কচাকাটা থানার সামনে জড়ো হয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এদিকে, নিহতের স্ত্রী সাহিদা বেগম একমাত্র মেয়ে নিহাকে (৪) নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। তিনি মৃত্যুর খবর পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ঢাকা থেকে বল্লভেরখাস এলাকায় স্বামীর বাড়িতে আসেন। তিনি বাব বার মুর্ছা যাচ্ছেন। ছোট নিহা এ ঘর-ও ঘর করে খুঁজছে প্রিয় বাবাকে।

এর মাঝেই বিলাপ করতে করতে সাহিদা অভিযোগ করেন, তার স্বামী রাজা মানুষের সেবা করতেই ভাল চাকরি ছেড়ে এলাকায় পড়ে থাকেন। এজন্য শত্রুতে পরিণত হন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের। আব্দুল জলিলের সঙ্গে কচাকাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সখ্যতা ছিল। ওসি মোস্তাফিজুর রহমান সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম করায় তার প্রতিবাদ জানায় রাজা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় পুলিশের রোষানলে পড়েন রাজা। এ কারণে এ হত্যাকাণ্ডে ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের ইন্ধন আছে বলে তিনি মনে করেন।

মাদারগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন জানান, রাজা এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি সোচ্চার থাকতো। গত ইউপি নির্বাচনে বল্লভের খাস ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অল্প ভোটে হেরে যান। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এখন থেকে গণসংযোগ করে আসছিলেন। তার প্রতিপক্ষরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে সবার ধারণা। নিহত রাজার স্ত্রী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। তাদের এক শিশু কন্যা রয়েছে।

কচাকাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভোর রাতে বকুলতলা হাজীপাড়া গ্রামের জোড়া দীঘির পানি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম মর্গে মরদেহ পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দুই নারীসহ মোটরসাইকেল চালক আলতাফ হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার মোটিভসহ আসামি ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিপক্ষ বল্লবের খাস ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল জলিলের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ওই বাড়িসহ পার্শ্ববর্তী ৩টি বাড়ি পুড়ে ভস্মিভূত হয়। পরে নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।

নাজমুল হোসেন/এসএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।