নিউটনের ৭ হাত লম্বা কচু এখন দেশের বাইরে
ডুমুরিয়ার ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা নিউটন মন্ডল পানি কচু চাষ করে সফল কৃষকদের তালিকায় তিনি এখন ১১তম। শুধু কচু চাষ করেই তার এ সফলতা। তিনি শুধু দেশের মধ্যে কচু নিয়ে বসে নেই। সেই কচু দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে কোরিয়া পর্যন্ত। ৬-৭ ফুট লম্বা হওয়ায় তার কচু দেখতে অনেকেই এখন ভিড় করছেন তার ক্ষেতে। কচুর পাশাপাশি এখন চাষ করছেন চুঁইঝাল, বিটি বেগুন, পেয়ারা এবং করেছেন গরুর খামার।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের ঘোনা মাদারডাঙ্গা গ্রামে বাড়ি নিউটন মন্ডলের। দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশ দিয়ে গেলেই দেখা মেলে পানিকচুর ক্ষেত।
তাকে এলাকায় এখন কচু নিউটন বললেই চেনে সবাই। একসময় নিউটন মন্ডল বেসরকারি পাটকলে কাজ করতেন। পাটকলে কাজের সময় শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা তাকে পেয়ে বসে। মিলের কাজ ছেড়ে দেন। অভাবের সংসারে কী করবেন, এমন চিন্তা থেকে বাড়ির পাশে ৩৪ শতক জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন বিভিন্ন সব্জির চাষ। লাভজনক না হওয়ায় ২০০৫ সালে তিনি জমির কিছু অংশে স্থানীয় জাতের পানিকচুর চারা রোপণ করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এখন জমির পরিমাণ ৫৫ শতক। বর্গা নেয়া এ জমি প্রতি বছর ভাড়া দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। এখন কচুরলতি, ফুল ও কচু এবং চারা বিক্রি করে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় করেন নিউটন। ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি।
নিউটন জানান, ঘেরের পাড় থেকে দেশি জাতের কিছু পানিকচুর চারা সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে রোপণ করা হয়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে গাছ লাগানো শেষ হয়ে যায়। তিন ফুট দূরত্বে কচুর চারা রোপণ করা হয়। কোদাল দিয়ে এক ফুট গভীর করে চাষ দেয়া হয়। চারা লাগানোর পর জৈব ও রাসায়নিক সার দেন সুষমভাবে।
রোপণের ৪৫ দিনের মাথায় লতি বিক্রির উপযোগী হয়। তার এ কচু ৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রত্যেকটির ওজন হয় ২০-৩২ কেজি। নিজস্ব ভ্যানে খুলনা শহরে নিয়ে কচু বিক্রি করেন নিউটন। তথ্যপ্রযুক্তি (ফেসবুক) ব্যবহার করেও বিক্রির কার্যক্রম করেন তিনি। এখন সেই কচু কোরিয়ায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি চলছে। ক্ষেত থেকে কচু তুলে পরিষ্কার করে ছিলে ফেলা হচ্ছে। পরে এক হাত করে কেটে রোদে শুকাতে দেয়া হয়। তিন-চারদিন শুকানোর পর সেই কচু খুলনা শহরে এনে কোরিয়ান বায়ারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
কচু চাষি নিউটন মন্ডল জানান, এতদিন আমার কচু দেশের মধ্যে খুলনা, বরিশাল, ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগে গেছে। এখন সেই কচু যাচ্ছে দেশের বাইরে। একসময় মানুষের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও কেউ ফিরে তাকাতো না। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ আমারে চেনে। অনেক বড় বড় মানুষ আমার ক্ষেত দেখতে আসে। শ্রম কখনও বিফলে যায় না। এখন একটাই স্বপ্ন মেয়েটা বড় হয়ে ডাক্তার হবে। এলাকার গরিব, দুঃখী মানুষের সেবা করবে।
নিউটনের স্ত্রী স্মৃতিলতা মালাকার জানান, শুরুর দিকে অনেক মানুষ অনেক কথা বলেছিল। আমরা থেমে যাইনি। এখন সেই কচুতে আমাদের পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। আমাদের মেয়েটি স্কুলে যাচ্ছে। গরুর খামার করেছি। পেয়ারার চাষ, বিটি বেগুন চুঁইঝালের চাষাবাদও ভালো হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, নিউটন মন্ডল একজন ভালো কৃষক। তাকে নিয়মিত আমরা মনিটরিং করছি। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। তার এ কচু বেশ টেস্টি। তার কচু এখন প্রসেসিং হচ্ছে কোরিয়া যাওয়ার জন্য।
আলমগীর হান্নান/এমএএস/পিআর