বয়াবাতির অভাবে রাতে বিচ্ছিন্ন সন্দ্বীপ হয় মাদকের ‘স্বর্গরাজ্য’
সূর্যের আলো পশ্চিম আকাশে অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সন্দ্বীপ। অন্ধকারের সুযোগে শুরু হয় মাদকের রমরমা কারবার। এ ছাড়া অসুস্থ রোগীদের নিয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিতে স্বজনদের পড়তে হয় বিপাকে। অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অবহেলায় যুগ যুগ ধরে বিচ্ছিন্ন এ জনপদ।
স্থানীয়রা বলেন, মাত্র ছয়টি বয়াবাতির অভাবে সন্ধ্যা নামতেই সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সন্দ্বীপ। ফলে প্রকৃতির খেয়াল খুশিমতো এই দ্বীপের মানুষ যাতায়াত করে। ভোরের আলো ফোটার আগে কোনো জরুরি প্রয়োজন হলেও চট্টগ্রামে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই।
তারা বলেন, ‘সন্ধ্যার পর অসুস্থ রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। বয়াবাতি না থাকায় অন্ধকারে কোনো ধরনের নৌযান চালানো সম্ভব হয় না। এখানে শেষ নয়, কথায় আছে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। বিচ্ছিন্নতার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু এলাকাকে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। বিশেষ করে গুপ্তছড়া ও ছোঁয়াখালীর আশপাশের এলাকা। তাই অবিলম্বে বয়াবাতি স্থাপন করা হলে রাতেও সাগর পাড়ি দেয়া যাবে। চট্টগ্রামের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।’
যদিও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে ইতোমধ্যে বয়াবাতি স্থাপনে প্রতিশ্রুতি মিলেছে। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জরুরি কারণে রাতে যাতে সন্দ্বীপবাসী সাগরপাড়ি দিতে পারে, সেজন্য অবিলম্বে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি বয়াবাতি স্থাপন করা হবে।
এদিকে জানা গেছে, এ দ্বীপের সচেতন নাগরিকরা এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে।
সম্মিলিত সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপি বলেন, নদীশাসন করে ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে যাতায়াত সমস্যা লাঘব করা এবং বয়াবাতি স্থাপন করে এই দ্বীপের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আন্তরিকতাই যথেষ্ট। নৌ প্রতিমন্ত্রী বয়াবাতির ঘোষণা দিয়েছেন, তার ২ মাস হতে চলছে, এখনও বাস্তবায়ন না দেখে আমরা হতাশ।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন মিশন বলেন, কিছুদিন আগে আমার ছোট ছেলে অসুস্থ হয়ে পরলে, তাকে নিয়ে রাতে সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিতে হয়। অন্ধকারে কূলকিনারা খোঁজে পাচ্ছিল না চালকরা। সে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। তাই সন্দ্বীপ চ্যানেলে বয়াবাতি স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরীফুল আলম বলেন, অনেক সময় আমরা রাতে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ইয়াবার চালানের খবর পেয়েও করার কিছু থাকে না। দাগী আসামিরাও পালিয়ে যায়। বয়াবাতি স্থাপন করা হলে অপরাধও অনেকাংশে কমে আসবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, রাতের বেলায় সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার জন্য বয়াবাতি স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। আমি বারবার নৌপ্রতিমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে আসছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, শিগগিরই দৃশ্যমান কাজ আমরা দেখতে পাব।
অপু ইব্রাহিম/জেডএ/এমকেএইচ