পিরোজপুরে জামায়ত নেতার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ


প্রকাশিত: ০৫:০০ এএম, ০৮ অক্টোবর ২০১৫

পিরোজপুরের নাজিরপুরে জামায়াত নেতা মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নিয়োগসহ শিক্ষক নিয়োগ ও উপ-বৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাকরি প্রদানের নামে উৎকোচ গ্রহণসহ উপ-বৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পরিচালনা পরিষদের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক থানায় মামলা দায়ের হয়।

জানা গেছে, উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের বাকসির এসএম দারুচ্ছুন্নাত দাখিল মাদ্রাসার সুপার আ. মান্নান সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভুতভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নিয়োগ গ্রহণ করেন। দাখিল মাদ্রাসার সুপার (প্রধান) পদে চাকরি নিতে তখন (১৯৯৬) দাখিল শাখায় শিক্ষকতার ১০ বছরের অভিজ্ঞতার নিয়ম থাকলেও এমন কোনো অভিজ্ঞতা তার ছিল না। ওই সুপার এর আগে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারী নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখায় চাকরি করতেন বলে জানা গেছে।

তখন তার ইনডেক্স নম্বর ছিল ৩৫৯১০৬। এছাড়া তার শিক্ষা জীবনের সনদ থেকে দেখা গেছে সকল সনদই দ্বি-নকল বা ত্রি-নকল ও ঘসা-মাজা ফলাফলসহ নিজ নামে কোথাও মো. আ. মান্নান বা আ. মান্নান রয়েছে। ওই মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মো. আ. হামিদ শেখ অভিযোগ করেন, তার (আ. হামিদ) স্থানে কোনোরকম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা বা নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে একই পদে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার বটতলা গ্রামের মো. ওয়াহেদ আলীর ছেলে মো. ইলিয়াছ হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় গত তখন (২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওই মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম অভিযুক্ত সুপার মো. আ. মান্নানকে সাময়িক বরখাস্তসহ জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা শিক্ষকের এমপিও বাতিলের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় তখন ওই শিক্ষকের এমপিও বাতিল হলেও প্রায় সাড়ে ৯ বছর পরে সুপারের যোগসাজসে চলতি বছরের ১৫ জুলাই ওই শিক্ষকের পূর্বের ইনডেক্স পুনর্বহাল করে বেতন-ভাতা চালু করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই সুপার ও জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ  দেয়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. আ. হামিদ শেখ বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করলে তা দুদকে তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, অভিযুক্ত সুপার পটুয়াখালী সদর উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও বর্তমানে রোকন বলে ওই উপজেলার জামায়াতের দায়িত্বশীল এতটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. আ. হামিদ জানান, ১৯৯৩ সালের ২৮ ডিসেম্বরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়োগ দিলে ২০০৪ সালে  মাদ্রাসাটি যখন এমপিওভুক্ত হয় তখন তিনি (আ. হামিদ) ও সুপারসহ পাঁচজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হননি। পরে সুপার ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে সুপার এমপিওভুক্ত হলে কোনো প্রকার ইন্টারভিউ বা নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই তিনি ওই ইলিয়াস হোসেনকে আমার (আ. হামিদ) স্থলে নিয়োগ দেখিয়ে বিল ভাতার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে পাঠান।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সুপার মো. আ. মান্নানের সঙ্গে কথা বলতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। এসব বিষয়ে ওই মাদ্রাসার সাবেক (সদ্য সাবেক) সভাপতি ও উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি মো. আতিয়ার রহমান চৌধুরী নান্নুর কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে মামলা চলছে। তবে ওই শিক্ষকের (ইলিয়াস) নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো রেজ্যুলেশন বা লিখিত ডকুমেন্ট মাদ্রাসার ফাইলে নেই।

হাসান মামুন/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।