রূপগঞ্জে ২শ` বিদেশি নাগরিক আতঙ্কে


প্রকাশিত: ০৪:১৩ এএম, ০৮ অক্টোবর ২০১৫

ইতালিয়ান এবং জাপানি নাগরিক খুন হওয়ার পর রূপগঞ্জে শিল্পাঞ্চলে কর্মরত ১৮৩ জন বিদেশি নাগরিক এখন চরম উৎণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিরাপত্তার বিষটি জোরদার করলেও তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না।

অনেকে কাজের বাইরে আসা এমনকি শিল্প কারখানায় আগের মতো মুক্তভাবে কজকর্ম করছেন না। অনেকে আবার বাসভবন ছেড়ে বের হচ্ছেন না। যে কোনো হামলা এড়াতে এবং জামায়াত-শিবির আটকের জন্য ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ও র্যাব।

এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বস্ত করা হলেও কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের ভয় কাটছে না। অনেকেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করে দেশ ছাড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় শিল্প মালিকরা বিপাকে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাগো নিউজজেক বলেন, রূপগঞ্জে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে কর্মরত নাগরিকরা নিরাপদে রয়েছেন।

রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, রূপগঞ্জের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় অন্তত ২শ বিদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। আমরা স্বশরীরে গিয়ে এসব বিদেশি নাগরিকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তাদের নিরাপত্তার জন্য রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সতর্ক রয়েছেন। রূপগঞ্জে অবস্থারত বিদেশি নাগরিকরা নিরাপত্তাহীন নন বলে জানান তিনি।

রূপগঞ্জ শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ইউনাইটেড লেদার, এসিএস টেক্সটাইল, সিটি অয়েল মিল, রবিন টেক্স বাংলাদেশ লি., এসিএস টাওয়েল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, লিতুন ফেব্রিক্স, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, টি ওয়ান ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাপান, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, চীন, ফিলিপাইন, জার্মানি, কোরিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বিদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন।

তাদের মধ্যে তেতলাবোর এসিএস টেক্সটাইলে ৮৬ জন, রূপসীর সিটি অয়েল মিলে ১০ জন, বাংলাদেশ এডিভয়েলে ২৫ জন, টি ওয়ান ইন্টারন্যাশনালে ২০ জন, আরিয়াবোর অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজে ১২ জন, বরপা লিতুন ফেব্রিক্সে ২ জন, ভুলতার বেনেটেক্সে ১৫ জন, ভুলতার রবিনটেক্সে ৩ জন, ইউনাইটেড লেদারে ১০ জন। দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারাও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছেন বলে জানা গেছে। অনেকে বাংলাদেশে কাজ করতে অনীহা জানাচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলো।

রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাহাদুর বেপারী জাগাে নিউজকে বলেন, আমরা বিদেশি কর্মকর্তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এসিএস (পাকিস্তানি মিল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আগভাগী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল বিদেশি নাগরিক নিরাপদে আছেন। প্রশাসনিকভাবেও তাদের দেখভাল করা হচ্ছে। তাদের বাসভবনের চারপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মীসহ চলাচলের সময় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী সঙ্গে  দেয়া হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মো. কবীর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা আগে থেকেই সতর্ক। এখানে বহিরাগত লোক ঢুকে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর মতো সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই কর্মরত অধিকাংশ বিদেশি নাগরিকরা বসবাস করেন।

রূপগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই। আমরা সতর্ক আছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ রয়েছে বিদেশি নাগরিকদের উপর সবসময় নজরদারি করতে। গোয়েন্দা শাখার (ডিএসবি) আরেক কর্মকর্তা মো. হানিফ হাওলাদার জাগো নিউজকে জানান, রূপগঞ্জের শিল্প-কারখানায় প্রায় ২শর বেশি বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। তাদের প্রতি নজর রাখার নির্দেশ রয়েছে। পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের উপরও নজরদারি করা হচ্ছে।
 
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) একেএম জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশি নাগরিকদের রূপগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে কোনো ধরনের ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই। দেশের বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতি এড়াতে আমরা শিল্পাঞ্চলে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করেছি। তাছাড়া, ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি নাগরিকের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। জামায়াত-শিবিরসহ যেকোনো ব্যক্তি দ্বারা নাশকতা রোধ করতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে সাতজন শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

মীর আব্দুল আলীম/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।