নষ্ট হওয়া বিদ্যুৎ রক্ষার যন্ত্র তৈরি করলেন দুলাল
বাড়তি কোনো খরচ না করে বাণিজ্যিক ও আবাসিক সকল বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই যন্ত্রটি ব্যবহারে বিদ্যুৎ অপচয় রোধসহ গ্রাহকদের সকল ধরনের ভোগান্তি কমে যাবে। আর বিদ্যুতের ব্যবহারও আরো বাড়ানো সম্ভব। এমন যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির বজরু দুলাল।
নতুন এ উদ্ভাবনটি কাজে লাগানো গেলে বিদ্যুতের ব্যবহার আরো বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয় পল্লি বিদ্যুতের কর্মকর্তারা।
উদ্ভাবক দুলালের দাবি, কোনো এলাকায় নির্ধারিত বিদ্যুতের চেয়ে চাহিদা বেশি হলে কর্তৃপক্ষ বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে বাধ্য হন। লোডশেডিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। লোডশেডিং হওয়ার ফলে একদিকে যেমন গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত হন, অপরদিকে বিদ্যুতের অপচয় হয়।
লোডশেডিং হওয়ার পরও বিদ্যুতের তারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ চালুই থাকে কিন্তু তা কোনো কাজে আসে না। ফলে সঞ্চালন লাইনে থাকা বিদ্যুৎ টুকু অব্যবহৃত থেকে অপচয় হয়। কিন্তু যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তার উদ্ভাবিত ডিভাইসটি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক এবং আবাসিক সংযোগ আলাদা করেই লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাহলে কোনো সময়ই বিদ্যুতের অপচয় হবে না।
ডিভাইসটি ব্যবহার করে যে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে তা দিয়ে নতুন সংযোগ প্রদান করে সরকারও আয় বাড়াতে পারবে। সিস্টেম লসের কারণে সরকারের কোনো বিদ্যুৎ অপচয় হবে না।
ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর উপর ঝোঁক ছিল বেলকুচির সূবর্ণসাড়া গ্রামের বজরু দুলালের। তার এ ঝোঁক এক সময় নেশাতে পরিণত হয়। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে নিজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইউপিএস, আইপিএস, সেচ পাম্পের ডিজিটাল পদ্ধতি, মোবাইল দিয়ে সেচ পাম্প চালু ও বন্ধসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক সামগ্রী তৈরি করেছে। যা তার গ্রামের মানুষ ব্যবহার করে আসছে।
সর্বশেষ তিনি উদ্ভাবন করেছেন বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করার এক নতুন যন্ত্র। যার মাধ্যমে একই ফিডারে থাকা বাণিজ্যিক এবং আবাসিক সংযোগের লোডশেডিং আলাদা আলাদাভাবে দেয়া সম্ভব।এই যন্ত্রটি ব্যবহার করতে নতুন করে কোনো তার, খুঁটি, বা ট্রান্সফরমার ব্যবহার করতে হবে না। পুরানো সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমেই এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে আলাদা আলাদাভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই যন্ত্রটি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ অপচয় রোধসহ সেই বিদ্যুৎ নতুন গ্রাহকের মাঝে দেয়াও সম্ভব বলে দাবি করেছেন উদ্ভাবক দুলাল।
এলাকাবাসী জানান, দুলাল ছোটবেলা থেকেই নুতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবনের চেষ্টায় মত্ত থাকতো। তার নতুন আবিষ্কারে তারা অনেক খুশি। সরকার সহযোগীতা করলে দুলাল অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
পল্লি বিদ্যুতের বেলকুচি শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান জানান, এ উদ্ভাবনটি আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবহার করা গেলে সরকার লাভবান হবে। পাশাপাশি আবাসিক এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমে যাবে।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যেই স্থানীয় ডিজিটাল মেলায় এই আবিষ্কারটি প্রথম হয়েছে। সরকারের উচ্চ মহলের নজরে আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই ডিভাইসটি সঠিকভাবে কাজ করলে তা দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রে ব্যবহারের উদ্যোগ নিলে বিদ্যুতের অব্যবহৃত অপচয় রোধসহ আরো বেশি মানুষকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব। এলাকাবাসীসহ বজরু দুলালের প্রত্যাশা তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি সরকারিভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাদল ভৌমিক/এআরএ/আরআইপি