রাস্তার জন্য জায়গা না দেয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করলেন এসিল্যান্ড
নরসিংদীর বেলাব উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) মো. বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি পরিবারের মিটার খুলে নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের আমিনুল হকের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী তিন পরিবারের সদস্যরা এ অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী তিন পরিবারের সদস্যরা বলেন, নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্য আমরা জমি না দেয়ায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুরে এসিল্যান্ড বেলাল হোসেন উপস্থিত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার খুলে নিয়ে যান। এ সময় আমিনুল হকের সকল সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেন। কোনো ক্ষতিপূরণ না আমাদের নামজারি বাতিল করে নতুন রাস্তা নির্মাণ করবেন বলে হুমকি দেন। এমনকি আমাদেরকে গাড়ির চাকার সঙ্গে বেঁধে নিয়ে যাবেন বলেও হুমকি দেন। বর্তমানে তিন পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় ছেলে-মেয়ারা ঠিকমত লেখাপড়া করতে পারছে না।
ভুক্তভোগী আমিনুল হক বলেন, আমার প্রতিবেশি আব্বাস মিয়া তার সুবিধার্থে এসিল্যান্ডকে নিয়ে আমার বাড়িঘর ভাঙচুর করে রাস্তা নির্মাণ করতে চান। আমি চাই তারা সরকারি হালটের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করুক। আমার নিজের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে দিব না। এ কারণে এসিল্যান্ড আমার বাড়িতে এসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার খুলে নিয়ে গেছেন। চলে যাওয়ার সময় রাস্তার জন্য জায়গা না দিলে বাড়িঘর ভাঙচুর,খারিজ বাতিল ও গাড়ির সঙ্গে বেঁধে নিয়ে যাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের আরেক সদস্য মো. বাবুল মিয়া বলেন, বিদ্যুতের সকল বিল পরিশোধ থাকার পরও কেন এসিল্যান্ড বেলাল হোসেন আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তা আমরা জানি না। এর আগে রাস্তার জন্য জমি দেয়াকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রতিবেশী আব্বাস মিয়া, রুহুল কবির, ইলিয়াস আমার মাদরাসা পড়ুয়া ৮ বছরের ছেলে হানজালাকে ধরে নিয়ে মারধর করে ঘাড় ভেঙে দেয়। বর্তমানে আব্বাস রাস্তার জন্য জমি না দেয়ায় আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এই আব্বাসই এসিল্যান্ডকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের আরেক সদস্য নাসির উদ্দীনের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তানিয়া আক্তার বলেন, আমাদের কোনো বিদ্যুৎ বিল বাকি নেই। তারপরও কেন এসিল্যান্ড সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তা বুঝতে পারছি না। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় আমাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে।
অভিযুক্ত আব্বাস মিয়া বলেন, ওই তিন পরিবার এলাকার কাউকে মানে না। তারা গ্রাম্য সালিশও মানে না। এসিল্যান্ড তাদেরকে রাস্তা দেয়ার জন্য জায়গা দিতে বারবার বললেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। তারা মামলাবাজ। আমার বিরুদ্ধে তারা সাতটি মিথ্যা মামলা করে আমাকে হয়রানি করেছে। যে জায়গা দিয়ে আমরা রাস্তা নির্মাণ করতে চাচ্ছি সেটা সরকারি জায়গা। অথচ তারা এই জায়গাটি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছে।
নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ডিজিএম মো. খোরশেদ আলম বলেন, অবৈধ বাড়িঘর উচ্ছেদ করার জন্য এসিল্যান্ডের নির্দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
বেলাব উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমি প্রথম দিকে তাদেরকে রাস্তার জায়গা দিতে বলছিলাম। যতটুকু জমি তারা রাস্তায় দেবে ততটুকু জমি তার পাশের জমির মালিক তাদেরকে দিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছিলাম। এরপরও তারা এখানে রাস্তা নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছে। যেহেতু এটা পুরোনো রাস্তা তাই এ এলাকার জনগণের দাবি রাস্তা এখান দিয়েই হতে হবে। তাছাড়া প্রতিদিন রাজারামপুর গ্রামে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও আমার অফিসে এসে রাস্তা করার দাবি জানায়।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে জমির পর্চা লাগে, তারা পর্চা দেখাতে পারেনি তাই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
সঞ্জতি সাহা/আরএআর/পিআর