কক্সবাজার ছাড়ছেন বিদেশিরা


প্রকাশিত: ১০:৪১ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০১৫
ফাইল ছবি

ঢাকা ও রংপুরে পৃথক ঘটনায় ইতালি ও জাপানি নাগরিককে হত্যার পর নিরাপত্তার অজুহাত তুলে কক্সবাজারে হোটেলগুলোতে অগ্রীম রুম বুকিং বাতিল করে দিচ্ছেন বিদেশি নাগরিকরা। ইতোমধ্যে সাউথ আফ্রিকা মহিলা ক্রিকেট দলসহ অন্তত দুইশ বিদেশি নাগরিক রুম বুকিং বাতিল করেছে বলে হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ সাউথ আফ্রিকা মহিলা ক্রিকেট দলের জন্য ১৫ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসে বুকিং থাকলেও গতকাল সোমবার তা বাতিল করে দেয়া হয়। পাশাপাশি ঈদের পর যেসব বিদেশি কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন তারাও কক্সবাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যা পর্যটন ব্যবসার জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন হোটেল মালিকরা।

হোটেল ওশান প্যারাডাইস’র সিনিয়র ব্যবস্থাপক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) খায়রুল আনাম ও রুম ডিভিশন ম্যানেজার মজিদুল আলম মাজেদ জানান, সম্প্রতি দেশে দু’বিদেশি নাগরিক হত্যার পর কয়েকটি দূতাবাস স্ব স্ব দেশের নাগরিকদের সতর্কতার সাথে চলাচল করতে নির্দেশনা জারি করে। এরপর কক্সবাজারে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকরা তাদের ভ্রমণ সময় কমিয়ে দ্রুত হোটেল ত্যাগ করে কক্সবাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, হোটেল ওশান প্যারাডাইসে সাউথ আফ্রিকা মহিলা ক্রিকেট দলের জন্য ১৫ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১৫টি কক্ষ অগ্রীম রুম বুকিং ছিল কিন্তু নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে গত ৫ অক্টোবর তা বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

হোটেল লং বিচে বুকিং বাতিল করেছেন জাপানের কয়েকজন নাগরিক। তাদের নামে ৪৫টি কক্ষ অগ্রিম বুক করা ছিল। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মশালায় অংশ হিসেবে তাদের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু তাদের দেশের নাগরিককে হত্যার পর সোমবার তারা বুকিং বাতিল করেন বলে জানান ওই হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার ইমরান হোসেন।

তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) একটি প্রতিনিধিদলের জন্য ২০টি কক্ষ বুক করা ছিল। সেটিও বাতিল করা হয়েছে।

হোটেল সী-গালের প্রধান নির্বাহী শেখ ইমরুল ইসলাম সিদ্দিকী রুমি জানান, বর্তমানে কোন বিদেশির অগ্রীম রুম বুকিং না থাকলেও ঈদের পর প্রতিদিন একজন করে বিদেশি হোটেলে উঠত। কিন্তু ঢাকা ও রংপুরে পৃথক ঘটনায় ইতালি ও জাপানি দুই নাগরিককে হত্যার পর  হোটেলে আর কোনো বিদেশি নাগরিক দেখা যাচ্ছেনা।

বিদেশিদের অনেকটা প্রিয় স্থান পেচারদ্বীপ মারমেড ইকো রিসোর্ট এর ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার রানা হামিদ জানান, রোববার ও সোমবার বিদেশি নাগরিকের জন্য বুকিং দেয়া ২/৩টি রুম বাতিল করা হয়েছে তবে তারা কোন দেশের নাগরিক তা জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে বর্তমানে মারমেড ইকো রিসোর্টে কোনো বিদেশি নাগরিক নেই বলে জানান তিনি।

এ ছাড়াও আরো বিভিন্ন হোটেলে নিরাপত্তার অজুহাত তোলে বিদেশি নাগরিক চলে যাওয়া এবং রুম বুকিং বাতিল করা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময়ী পর্যটন শিল্পের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন কক্সবাজার হোটেল মালিকদের সংগঠন হোটেল মালিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এন করিম।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত নজর দেয়া দরকার সরকারের। না হয়, ২০১৬ সালকে সরকারের পর্যটন বর্ষ ঘোষণা বিফলে যেতে পারে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,  ঢাকা ও রংপুরে পৃথক ঘটনায় ইতালি ও জাপানি দুই নাগরিককে হত্যার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে একাধিক নির্দেশনা দিয়ে একটি বিশেষ চিঠি এসেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। কোনো অজুহাত তোলা যাবে না। সময়মতো অফিস করতে হবে। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের কর্মকাণ্ডে সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হবে। সন্ত্রাসীদের তালিকা নতুন করে দ্রুত হালনাগাদ করতে হবে। সার্বক্ষণিক চেকপোস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা শহরে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। উচ্চতর ভবনগুলোতে সিসি ক্যামেরা আছে কি না বা সেগুলো সচল রয়েছে কি না তাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, মোটরসাইকেলে করে বেশি অপরাধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে। সে কারণে সব ধরনের মোটরসাইকেল নজরদারির আওতায় আনতে হবে। হেলমেট ছাড়া কেউ মোটরসাইকেল চালালে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। নিবন্ধনবিহীন মোটরসাইকেল পেলে তা আটকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার উদ্যোগ নিতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পেরে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নজরদারি করতে হবে। যেকোনো বিদেশি এলে তাদের পাসপোর্ট নম্বর এবং তারা কত দিন বাংলাদেশে অবস্থান করবে সে তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরকে জানাতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে স্থানীয় থানাকেও জানাতে হবে।

সূত্র জানায়, চিঠি পাওয়ার পর পুলিশ সুপার (এসপি) থানার ওসিদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করছেন। তারা নিরাপত্তা বাড়াতে যা যা করা দরকার সেসব উদ্যোগ নিয়েছেন।

চিঠির বিষয়টি অনেকটা এড়িয়ে গিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারে তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই সাথে কক্সবাজার শহরের সব হোটেলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর জন্য হোটেল মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, আগামী ২০১৬ সালকে সরকার পর্যটন বর্ষ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ খাতকে বিশ্বমানের করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। সে কারণে পর্যটক সেবার নির্বিঘ্ন করতে সচেষ্ট রয়েছে জেলা প্রশাসন।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।