সুগন্ধা-বিষখালীতে অসময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ১০:৪৩ এএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

কেবল ঝালকাঠি জেলাতেই বয়ে চলেছে সুগন্ধা, বিষখালী, গাবখান ও হলতা নদী। এসব নদ-নদীতে এই শীত মৌসুমেও ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। আকারে বেশ বড় এসব ইলিশ অন্যান্য সময়ের চেয়ে খেতেও সুস্বাদু। মাছ বিক্রির নির্দিষ্ট বাজার ছাড়িয়ে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে শহরের অলি-গলি ও বাসা বাড়িতে।

ঝালকাঠির মাছ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, শীতে সাধারণত ইলিশ মাছের আমদানি কম থাকে। কিন্তু এ বছর শীতে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। অন্যান্য বছর এ সময় বাজারে ছড়াছড়ি থাকে সামুদ্রিক মাছের, কিন্তু এ বছর রয়েছে ইলিশের ছড়াছড়ি।

মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ইলিশ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে এখন বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজনও বেড়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুম দুটি। একটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এবং আরেকটি জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। সরকার সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে ২২ দিন ইলিশ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও মজুদ নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। এসব কারণে ইলিশ তার পরিপূর্ণ জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারছে। জাটকা ও মা ইলিশ ভালভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে। এজন্যই এখন এত ইলিশ ধরা পড়ছে।

ভরা মৌসুমে নদীতে জাল ফেললেই জেলেরা ছোট বড় ইলিশ পেয়ে থাকেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে জাল ফেলার উৎসব চলে মৌসুমজুড়ে। সারা বছর ইলিশ ধরা পড়লেও আগস্ট মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। তবে এ বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতেও প্রচুর ইলিশ জালে আটকা পড়ছে। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন সুগন্ধা-বিষখালীর ইলিশ পাইকারদের মাধ্যমে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। দেশ ছাড়িয়ে ভারতেও রফতানি হয় ঝালকাঠির সুস্বাদু রূপালি ইলিশ।

নলছিটি জেলে পাড়ার বাসিন্দা প্রবীন জেলে জুধিস্টি দাস বলেন, আমাদের নদীতে সারাবছরই ইলিশ পাওয়া যায়। সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময়টুকু বাদ দিয়ে আমরা দিনরাত নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরি। মৌসুমে ঝাঁকেঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে জালে। তাজা ইলিশ নদীর তীরে বসেই অনেকে কিনে নিয়ে যান। প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ১০ কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। বরিশাল থেকে মাছের আড়তদাররা এসে এখান থেকে ইলিশ কিনে নেয়। সেই ইলিশ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্নস্থানে। অনেক সময় ভারতেও পাঠানো হয় সুগন্ধার সুস্বাদু ইলিশ।

চরবহরমপুর এলাকার জেলে আবুল কালাম বলেন, সুগন্ধার ইলিশ খেতে খুবই সুস্বাদু। আমাদের আশপাশের এলাকার মানুষ সারাবছরই সুগন্ধার ইলিশ খাচ্ছেন। ইলিশ ভাজার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। মিঠা পানির রূপালি ইলিশ ধরতে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জোয়ারের শুরুতে জাল ফেলি। এসময় মাছগুলো একত্রিত হয়ে ছোটাছুটি করে, তাই সময়মত জাল ফেলতে পারলে প্রতিনৌকায় ১০-১৫ কেজি করে ইলিশ পাওয়া যায়।

মাটিভাঙা এলাকার জেলে রবিউল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শুরুতে মাছে পানিতে সমান থাকে ইলিশ। একটি জাল ফেলতে সময় লাগে ২০ মিনিট, আর তুলতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। সব মিলিয়ে এক ঘণ্টায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে।

ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা জানান, সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসাব করে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে টানা ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা, বিক্রয়, পরিবহন ও মজুদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অভিযানের সময় জেলেরা নদীতে নামতে পারেনি। তাই এ বছর প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে সুগন্ধা-বিষখালী নদীতে। সুগন্ধার-বিষখালীর মিঠা পানির ইলিশ খেতে সুস্বাদু, তাই স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা এসে ইলিশ কিনছে জেলেদের কাছ থেকে।

আতিকুর রহমান/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।