লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ১০১ বার পানিতে চুবিয়ে চিকিৎসা, যুবকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ০৯:৪৭ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকায় ভণ্ড ফকিরের অপচিকিৎসায় কালাম মৃধা (৪২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার আউলিয়াপুর ভণ্ড ফকিরের আস্তানার পাশ থেকে কালাম মৃধার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

ঘটনার পর ভণ্ড ফকির মো. রিয়াজ ও তার সহযোগী অসীম ফকির এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পরে অভিযান চালিয়ে রিয়াজ ফকিরের বোন অনিকা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।

নিহত কালাম মৃধা পটুয়াখালী সদর উপজেলার খলিশাখালী গ্রামের মৃত তুজম্বর মৃধার ছেলে। অভিযুক্ত রিয়াজ ফকির বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকার সুলতান ফকিরের ছেলে।

কালাম মৃধার স্বজনরা জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে কালাম মৃধা কথা কম বলতেন। একা থাকতে পছন্দ করতেন। বিষয়টি নিয়ে স্ত্রী পারভীন বেগম ও পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে স্বামীর চিকিৎসা করাতে দুই দেবরকে সঙ্গে নিয়ে রিয়াজ ফকিরের আস্তানায় যান পারভীন। এ সময় ভণ্ড ফকির রিয়াজ ও তার সহযোগী চাচাতো ভাই অসীম ফকির ঝাড়ফুঁক করে কালাম মৃধাকে জিনে ধরেছে বলে জানান।

সেই সঙ্গে ভণ্ড ফকির রিয়াজ চিকিৎসা করে কালামকে ভালো করতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন। এতে স্ত্রী পারভীন বেগম রাজি হন। এরপর জিন তাড়ানোর জন্য কবিরাজি চিকিৎসার নামে কালাম মৃধাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন রিয়াজ। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে ১০১ ডুব দেয়ানো হয়। সেই সঙ্গে পেটানো হয়। কাজ না হলে তাকে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এতে কালাম অসুস্থ হয়ে পড়লে একটি রুমে আটকে রাখা হয়। রাতে কালামের মৃত্যু হয়।

কালাম মৃধার স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, রাতে ভণ্ড ফকির রিয়াজ ও তার সহযোগী অসীম কালাম মৃধার মরদেহ বাড়ির পাশের বাগানে ফেলে রাখেন। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে রাত ৩টার দিকে রিয়াজ ফকিরের বোন অনিকা বেগম আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। শনিবার সকালে আমাকে তার বাড়ি থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনিকা। এ সময় সন্দেহ হলে চিৎকার দেই আমি। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে কালামের খোঁজ করতে থাকি। পরে ভণ্ড ফকির রিয়াজের আস্তানার পাশের বাগানে কালামের মরদেহ পাওয়া যায়।

বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি আবুল কালাম বলেন, শনিবার সকালে রিয়াজ ফকিরের বাড়ির পাশ থেকে কালামের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অপচিকিৎসার নামে রিয়াজ ফকির ও তার সহযোগী অসীম ফকিরসহ কয়েকজন কালাম মৃধাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনার পর রিয়াজ ফকির ও তার সহযোগী অসীম ফকির এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিয়াজ ফকিরের বোন অনিকা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।

সাইফ আমীন/এএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।