নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব
সাতক্ষীরার হাট-বাজারসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় ব্যবহার বাড়ছে দিনদিন।
ভারত থেকে চোরাইপথে আমদানিকৃত পলিথিনের দখলে এখন সাতক্ষীরার বাজার। ব্যবসায়ীরা চোরাইপথে ভারত থেকে আমদানি করেন এসব নিষিদ্ধ পলিথিন। ভারতীয় পলিথিন টেকসই, এজন্য ব্যবহার বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বজারে অধিকাংশ দোকানে ভারতীয় পলিথিনের কেজি বিক্রি হয় ৩০০ টাকা আর দেশি পলিথিন ২২০-২৫০ টাকা। এই বাজার থেকেই নিষিদ্ধ পলিথিন চলে যায় উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একদিকে চোরাইপথে আমদানি অন্যদিকে যত্রতত্র পলিথিন ব্যবহারে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। এতে নজরদারি নেই প্রশাসনের।
তবে প্রশাসন বলছে, নিষিদ্ধ পলিথিনের বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে তাদের। পলিথিন ব্যবহার দেখলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে চোরাইপথে আমদানিকৃত পলিথিন বন্ধে অভিযান চলছে।
সাতক্ষীরা শহরের সুন্দরবন কলেজ অব টেকনোলজির কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহম্মেদ বলেন, বাজার থেকে কোনো কিছু কিনলেই নিষিদ্ধ পলিথিনের মধ্যে ঢুকিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। বাধ্য হয়েই ক্রেতাদের সেগুলো নিতে হয়। এরপর প্রয়োজন শেষ হলেই ফেলে দেয়া হয় এসব পলিথিন। পলিথিন পচনশীল দ্রব্য নয়, এটা থেকে যায়। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় ব্যবহার বাড়ছে দিনদিন।
দেবহাটা ইছামতি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান বলেন, যেকোনো দোকানে ছোট আকারের পলিথিনের ব্যবহার এখন বেশি। ছোট পলিথিনের ব্যবহার না থাকলে মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। তবে সাতক্ষীরার বড় বাজারে রয়েছে বড় পলিথিনের ব্যবহার। এসব পলিথিন ভারতীয়। যা চোরাইপথে আমদানি করা। সাধারণ মানুষ পলিথিনের ব্যবহার করে যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে দিনদিন হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। একটি নির্দিষ্টস্থানে পলিথিন ফেলা উচিত এবং যথাসময়ে সেগুলো ধ্বংস করা উচিত।
সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, বাজারে বড় এবং ছোট দুই ধরনের পলিথিন পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি দোকানে রয়েছে পলিথিনের ব্যবহার। তবে পলিথিন দেশে এখন উৎপাদন হয় না। সেজন্য বাজারের পাইকারি বড় ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চোরাইপথে পলিথিন আমদানি করেন। বর্তমানে বাজারে যেসব পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে এসব পলিথিন ভারতীয়। ১০০ গ্রাম পলিথিন আমরা ২৫-৩০ টাকায় কিনি।
সুলতানপুর বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এখনও দেশি পলিথিন পাওয়া যায়। তবে সেগুলো ভালো না, দ্রুত ছিঁড়ে যায়। মালপত্র বহন করা যায় না। এক্ষেত্রে ভারতীয় পলিথিন মজবুত ও টেকসই, ছিঁড়ে না। ৫০০ গ্রাম, এক কেজি, দুই ও পাঁচ কেজি মালামাল বহনের মতো পলিথিনের কেজি ৩০০ টাকা। এসব পলিথিন ভারত থেকে আমদানি করা। সেজন্য দাম বেশি। আর দেশি পলিথিন কম দামে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ২২০-২৫০ টাকা।
পলিথিনের ব্যবহার ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ জানিয়ে সাতক্ষীরা জেলার মার্কেটিং কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা পলিথিনের ব্যবহার যেখানেই দেখব সেখানেই আইনগত ব্যবস্থা নেব। পলিথিন কেনাবেচা হচ্ছে- এমন ঘটনা সামনে পড়লেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। রাজধানী ঢাকাতে কিছু কারখানা রয়েছে। সেগুলো থেকে উৎপাদিত পলিথিন বিভিন্নভাবে আমাদের বাজারে আসে। আমাদের তদারকির পরও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং জোরদার করা জরুরি।
ভারত থেকে চোরাইপথে আমদানি করা নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ পলিথিন আমদানি, মজুত বা কেনাবেচা দেখলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার রোধে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, পলিথিন ব্যবহার রোধে নিয়মিত অভিযান চলছে। এটা অব্যাহত থাকবে। কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়ে বড় বাজারের একটি দোকান থেকে আধা মণ পলিথিন জব্দ করা হয। সেগুলো ধ্বংস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
তিনি বলেন, জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার রোধকল্পে কার্যকরী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামালের নির্দেশে জেলাব্যাপী পলিথিন ব্যবহার রোধকল্পে অভিযান শুরু হয়েছে।
আকরামুল ইসলাম/এএম/এমএস