ভোলায় জাটকা ধরার মহোৎসব

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ভোলা
প্রকাশিত: ১১:৪০ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জাটকা ইলিশ ধরার মহোৎসব চলছে। এসব জাটকা আবার অবাদে বাজারে বিক্রিও করা হচ্ছে। কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও মৎস্য বিভাগের কোনো অভিযান নেই। জাটকা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের এমন ভূমিকায় জন মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সচেতন জেলেরা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশ সংকট দেখা দেবে। এতে জেলে পল্লীতেও অভাব দেখা দিবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সদরের ইলিশা জংশন, রাজাপুর, ধনিয়া, তুলাতলি, ভোলারখাল, ভেলুমিয়া ও ভেদুরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল দিয়ে অবাদে জাটকা ইলিশ ধরছেন। এসব জাটকা ভোলা সদরের জংশন, রাজাপুর, তুলাতলি ও ভোলারখাল নামক বড় বড় মৎস্য ঘাটে প্রকাশ্যে ডাকে বিক্রিও করা হচ্ছে। এসব ঘাট থেকে জাটকা কিনে ভোলা শহরসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলেরা বলেন, ইলিশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগের কোনো ভূমিকা না থাকায় এসব হচ্ছে। আবার সঠিক প্রচার-প্রচারণার অভাবে অনেক জেলে জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ও আইনের কথাও জানেন না।

bhola03.jpg

জংশন এলাকার মেঘনা নদীর জেলে মো. সোহেল ও কবির বলেন, আমরা প্রতিনিদিনই নদীতে মাছ ধরছি। বড় মাছের আশায় নদীতে জাল ফেলি। জালে জাটকা ধরা পড়ে। আমরা তো বড় মাছের জন্য জাল ফেলি, কিন্তু এ এলাকায় হাজার হাজার জেলে রয়েছে যারা কারেন্ট জাল দিয়ে শুধু জাটকা ধরছেন। মৎস্য কর্মকর্তারা এখানে আসেন না।

তুলাতলি এলাকার জেলে মো. হানিফ ও নজরুল বলেন, গত মা ইলিশের অভিযানের পর থেকে নদীতে তেমন কোনো ইলিশ পাইনি। অনেক ধার-দেনা ও ঋণে জর্জরিত আছি। নদীতে বড় মাছও নেই। তাই নদীতে যে মাছ পাই তাই ধরি।

তারা জানান, তাদের কোনো জেলে নিবন্ধন নেই। এছাড়াও জাটকা আইন সম্পর্কে কেউ তাদের কখনও বলেনি। তাই তাদের কোনো ধারণাও নেই।

ভোলারখাল এলাকার কয়েকজন মাছ বিক্রেতা বলেন, জেলেরা নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে ছোট ছোট জাটকা ধরে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। আমরা বাধ্য হয়ে তা কিনে নিচ্ছি। কারণ জেলেদের কাছে আমাদের দাদন দেয়া রয়েছে।

তুলাতুলি এলাকার সতেচন জেলে মো. মালেক, তাজউদ্দিনসহ একাধিক জেলে বলেন, অসাধু জেলেরা সরকারি কোনো আইন না মেনে কারেন্ট জাট দিয়ে জাটকা ধরছে। তা আবার মৎস্য ঘাট, হাট-বাজার ও ঢাকার আড়তদারদের কাছে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ সদস্যরা মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে ওই জাটকা জব্দ করলেও মৎস্য বিভাগ অভিযান চালাচ্ছে না। এতে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশের মহাসংকট দেখা দিবে। জেলে পল্লীতে মারাত্মক অভাব দেখা দিবে। তাই আমরা সরকারের কাছে এসব জাটক শিকার ও বিক্রি বন্ধের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন করছি।

bhola03.jpg

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটারে নিচে ইলিশ শিকার, পরিবহন, বিক্রি, বাজার জাতের ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অথচ এ আইন মানছেন না অসাধু জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

ভোলার মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম জানান, মৎস্য বিভাগ কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়াও তারা পৃথক অভিযানও চালাচ্ছেন। তবে জনবল ও নৌযান সংকটের কারণে তারা পর্যপ্ত অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না।

তিনি আরও বলেন, ভোলার সাত উপজেলায় বর্তমানে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৬০ জন জেলের নিবন্ধন রয়েছে। বর্তমানে ভোলায় জেলে নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। জেলে নিবন্ধন শুরু হলে আমরা নিবন্ধনের বাইরে থাকা জেলেদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আশার চেষ্টা করবো।

জুয়েল সাহা বিকাশ/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।