স্বাচিপ নির্বাচনে যে কারো সঙ্গে লড়াইয়ে প্রস্তুত : ইকবাল আর্সলান
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেছেন, স্বাচিপের নির্বাচন হলে সভাপতি পদে যে কারো সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুুত আছি। যে কোনো হেভিওয়েট কিংবা সুপার হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হওয়ার ব্যাপারেও সম্পূর্ণরুপে আশাবাদী।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ভালবেসে রাজনীতি করি, রাজনীতি থেকে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু রাজনীতি যাদের কাছে ব্যবসা তাদের কেউ কেউ আগামী ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য স্বাচিপের সম্মেলনকে সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে নোংরা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে। তাদের মনে রাখা উচিত ইকবাল আর্সলানকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না, ভালবেসে জয় করতে হয়।
পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সাথে দীর্ঘ এক যুগ পর অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন স্বাচিপের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাপকালে এ সব কথা বলেন ডা. এম ইকবাল আর্সলান।
স্বাচিপের সম্মেলনকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের রাজনীতির মাঠ এখন সরগরম। কে হচ্ছেন পরবর্তী স্বাচিপের সভাপতি এ নিয়ে চিকিৎসক নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনার ঝড় বইছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে সভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাকি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন।
২০০৩ সালের সর্বশেষ স্বাচিপের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হককে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময় মহাসচিব পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই নির্বাচনে মহাসচিব পদে মোট ৫ জন- অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, আওয়ামী লীগের বর্তমান স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ, অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ও ডা.ইউনুস আলী আকন্দ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ইকবাল আর্সলান জয়ী হন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. আর্সলান বলেন, স্বাচিপ আওয়ামী লীগের একটি ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন। অন্যান্য সংগঠনে যেভাবে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় এখানেও সেভাবেই হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি চিকিৎসকদের সকলেরই অবিচল আস্থা রয়েছে। নেতৃত্বের জায়গা থেকে তিনি যদি কাউকে সভাপতি নির্বাচিত করে দেন তবে তিনিসহ সকলেই তা মেনে নিবেন।
নির্বাচন হলে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে এতটা আশাবাদী ও আস্থাশীল কেন জানতে চাইলে ডা. আর্সলান বলেন, বিগত দিনের নেতৃত্ব, সততা ও কর্মীদের প্রতি দায়বদ্ধতা তার সবচেয়ে বড় শক্তি। স্বাচিপের অধিকাংশ সদস্য যারা সাধারণ চিকিৎসক এবং যারা রাজনীতিকে ব্যবসা মনে করেন না তাদের মূল্যায়নেই তিনি জয়ী হবেন।
তিনি বলেন, ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্ট সবার জন্য কাজ করেছি। ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একেকজন চিকিৎসক তিন তিনবার প্রমোশন পেয়েছেন। কেউ কেউ চলতি পদে অধ্যাপক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হয়ে গেছেন। নন-ক্যাডার ১৩৬২ চিকিৎসক যারা ৩০ বছর যাবত ক্যাডারভুক্ত হতে পারছিলেন না তাদের ক্যাডারভুক্ত করা হয়েছে।
স্বাচিপের মহাসচিব বলেন, স্বাচিপের বয়স যখন ১৩ বছর তখন স্বাচিপের মহাসচিব পদে নির্বাচিত হয়েছি। তখন পর্যন্ত স্বাচিপকে সেভাবে কেউ চিনতেন না। সারাদেশে সাংগঠনিক কোনো শাখা ছিল না। ডাক্তার পরিচয় পেলে সকলেই জিজ্ঞাসা করতো আপনি কি ড্যাব নাকি বিএমএ। কিন্তু পরবর্তী দুই তিন বছরের মধ্যে দিনরাত মাঠে-ঘাটে, ঝড়বৃষ্টি ও ঝঞ্চাতে নিরলস পরিশ্রম করে পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে স্বাচিপকে ব্রান্ড ইমেজের সংগঠন করেছি। এখন ব্রান্ড ইমেজকে পুুঁজি করে অনেকে স্বাধীনতা অমুক পরিষদ তমুক পরিষদ তৈরি করছে।
তিনি জানান, সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায়। কিন্তু এ সময়ে কারো কাছ থেকে চার আনার সহযোগিতাও পাইনি। নিজের পকেটের টাকা সংগঠনের জন্য খরচ করেছি। বেতনের টাকা ঘরে নিতে পারি না, বলা যায় আমার সংসার চলে স্ত্রীর টাকায়।
ডা. আর্সলান বলেন, আমি যখন মহাসচিব নির্বাচিত হই তখন স্বাচিপের ফান্ডে কোনো টাকা ছিল না, কোনো ব্যাংক হিসাবও ছিল না। সারাদেশে স্বাচিপের সদস্যপদ সংগ্রহ ও বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠান পালনের সময় প্রাপ্ত অনুদান থেকে স্বাচিপের ফান্ডে টাকা জমা করেছি। তবে ফান্ডে কত টাকা জমা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।
১/১১ পর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভায় পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে স্বাচিপের মহাসচিব হিসেবে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবি জানিয়ে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন বলেও জানান ডা. এম ইকবাল আর্সলান।
তিনি বলেন, সে সময় অনেকেই পিছুটান দিয়ে ও সেনা সমর্থিত সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বড় পদ ভাগানোর স্বপ্ন দেখেছে ও ষড়যন্ত্র করেছে। ওই সময় তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিএসএমএমইউতে ডজনখানেক সেনা কর্মকর্তা নিয়ে হাজির হয়ে নানা প্রশ্নবানে জর্জড়িত করেছেন।
আমি তাদের বলেছি, শেখ হাসিনা আমার নেতা, আমি তার কর্মী। তার প্রতি আমার আনুগত্য অবিচল। শেখ হাসিনা যতদিন রাজনীতিতে থাকবেন আমি ততদিন রাজনীতিতে থাকবো। তিনি যেদিন রাজনীতি থেকে বিদায় নিবেন আমিও বিদায় নিবো। রাজনীতি থেকে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই। যোগ করেন তিনি।
কি কারণে চিকিৎসক নেতাদের অনেকেই তার সমালোচনা করেন জানতে চাইলে স্বাচিপের মহাসচিব বলেন, আমি অনেকের অনৈতিক নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও ব্যবসা বাণিজ্যে সহযোগিতা করতে রাজি না হওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে নানা বদনাম রটাচ্ছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি ‘দেয়ার ইজ নো মাদারসন্স হু কেন বায় ইকবাল আর্সলান উইথ অ্যানি অ্যামাউন্ট অব মানি, ইফ ইউ ক্যান বায় মি হান্ড্রেড টাইমস্ উইথ দেয়ার লাভ অ্যান্ড অ্যাফেকশন বাট নো মাদারসন্স এভার বর্ন ইন দিজ সয়েল হু কেন্ বায় ইকবাল আর্সলান উইথ অ্যানি অ্যামাউন্ট অব মানি।’
নীতি ও আর্দশের প্রশ্নে কারো সাথে আপোষ করবেন না বলেও জানান স্বাচিপের বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান।
এমইউ/একে