নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত


প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৫

নড়াইল জেলার ৫০ শয্যার একমাত্র আধুনিক সদর হাসপাতালটি ২০০৭ সালে ১শ বেডে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়া হলেও আজও তা চলছে ৫০ শয্যায়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও অন্যদিকগুলোর কোনই উন্নয়ন হয়নি।

হাসপাতালের ভেতরে বাইরের লোকদের জন্য তৈরি করা বাথরুমটির খোঁজ নেয় না কেউ। ভেতরের বাথরুমের গন্ধে রোগীরা বেডে থাকতে না পেরে সবসময় ওয়ার্ডে জানালা দরজা বন্ধ করে রাখনে রোগীরা। হাসপাতালের ময়লা আর আবর্জনায় ভরা চারিদিক, ড্রেনগুলাতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে নিয়মিত।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান মুন্সি জাগো নিউজকে জানান, ১শ শয্যার হাসাপাতালে বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক থাকার কথা অন্ততঃ ৪০ জন, সেখানে আছেন মাত্র ২৪ জন, তাও আবার নিয়মিত নন।

তত্ত্বাবধায়ক, সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), তিনজন সিনিয়র কনসালটেন্ট, তিনজন জুনিয়র কনসালটেন্ট, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), দুইজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি),রেডিওলজস্টি ,প্যাথলজিস্ট, দুইজন মেডিকেল অফিসার, তিনজন ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার, একজন ডেন্টাল সার্জন, পাঁচজন সহকারী সার্জনের পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সপ্তাহে দুই দিন মাত্র রোগী দেখেন।

এছাড়া ৪৪ জন নার্সের মধ্যে আছেন ৪৩ জন, আর টেকনিশিয়ান, অ্যাসিসট্যান্টসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অন্তত ১৪২ জন কর্মচারীর স্থলে আছে মাত্র ৪৩ জন।

প্রতিদিন হাজার হাজার লোক জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসলে লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে হয় হতভাগ্য রোগীদের। ৩/৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা কম নয়। অধিকাংশ ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ থাকে বেশিরভাগ সময়। আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় বেশিরভাগ রোগীকে স্থানান্তর করে দেয়া হয় যশোর অথবা খুলনার হাসপাতালে।

হাসপাতালের প্যাথলজিতে কাজ করেন মাত্র ১ জন। পরিচিত রোগী ছাড়া কেউই সেবা পাননা হাসপাতালের প্যাথলজিতে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েও বাইরে থেকে পরীক্ষা করে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি অথচ পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে হাসপাতালে। প্যাথলজি আবার বেলা ১২টার পর বন্ধ করে দেয়া হয়। অভিযোগ আছে এই হাসপাতালের টেকনিশিয়ানরাই বাইরের প্যাথলজিগুলোতে কাজ করেন।

হাসপাতালের আধুনিক যন্ত্রপাতির প্যাথলজি বেলা ১২টার পর বন্ধ হয়ে গেলেও ডাক্তার, রোগী আর হাসপাতালের টেকনিক্যাল কর্মচারীদের উপস্থিতিতে জমজমাট বিভিন্ন বেসরকারী প্যাথলজী সেন্টারগুলো। রোগীদের অর্থ বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের স্বার্থটাই কেবল দেখছেন এসব প্যাথলজীতে কাজ করা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানরা।

১০০ শয্যার মধ্যে কিছু বেড খালি রাখা হয়, অসাধু কর্মচারীরা সুযোগ বুঝে দূর থেকে আসা রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বেডে জায়গা করে দেন তাদের। প্রতিদিন অন্তত শ’খানেক রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি হওয়া এ সকল রোগীদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই।

স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর হলেও সরকারি দলের ছত্রছায়ায় কিছু ডাক্তার নিজেদের স্বার্থে নার্স  ও কর্মচারীদের ব্যবহার করে নিজেদের গণ্ডি তৈরি করে অসহায় রোগীদের ডাক্তারের নিজস্ব ক্লিনিকে  টেনে নিচ্ছেন আর জমি বেঁচে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা, আর এভাবে সর্বশান্ত হচ্ছেন গরীব মানুষরা। সবার জন্য মৌলিক এই সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধ পরিকর হলে ও ৯ লক্ষাধিক লোকের জন্য নড়াইলে নেই স্বাস্থ্য সেবার নিশ্চয়তা।

সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, ডাক্তারদের সেবা দেবার মানসিকতা গড়ে না উঠলে, রাজনৈতিক স্বার্থে চিকিৎসকদের ব্যবহার বন্ধ না হলে কোনোদিনও সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা সহজ হবে না।

নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. সুব্রত কুমার সাহা ডাক্তারদের চেম্বার বন্ধ থাকার কথা অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসক কম থাকার কারণে চিকিৎসা সেবায় মাঝে-মধ্যে বিঘ্ন ঘটতে পারে। ডাক্তারসহ অন্যান্য শূন্যপদ পূরণে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশাকরি, দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হবে।

হাফিজুল নিলু/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।