মন্দিরের বারান্দায় পাঠদান
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তে কড়াইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চলে প্রায় ৯০০ ফুট পার্শ্ববর্তী লখন্ডা গ্রামের রবীর বাজার দুর্গা মন্দিরের একচালা বারান্দায়। যার দুই পাশে বন্যার পানি। বেঞ্চে বসলে পা রাখতে হয় পানি অথবা কাঁদায়। স্থানীয় প্রশাসন সব জেনেও শিক্ষা ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
জানা যায়, একটি দোচালা ঘরে ১৯৬৮ সালে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মিত হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই সামান্য বৃষ্টিপাতে পানি পড়তে থাকে, প্লাস্টার খুলে পড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে বিদ্যালয় ভবনটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের প্রাণ রক্ষায় ও পাঠদানের সুবিধার্থে ভবন ছেড়ে প্রায় ৯০০শ ফুট দূরে পার্শ্ববর্তী লখন্ডা গ্রামের রবীর বাজার দুর্গা মন্দিরের একচালা খোলা বারান্দায় পাঠদান শুরু করে।
সরেজমিনে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানিতে মন্দিরের বারান্দার মেঝে তলিয়ে গেছে। বেঞ্চে বসলে পা রাখতে হয় পানিতে অথবা কাঁদায়। তারপরেও একই জায়গায় গাদাগাদি করে বসে এভাবেই প্রতিনিয়তই পাঠদান নিতে হচ্ছে। ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, ৪ জন শিক্ষক একই জায়গায় পাশাপশি বসে ৫টি শ্রেণির ১৮৯ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছেন।
৫ম শ্রেণির ছাত্র কার্তিক জানায়, একই সঙ্গে একই জায়গায় গাদাগাদি করে বসে ও একই সঙ্গে পাঠদান দেয়ায় অনেক সময় স্যারদের কথা ঠিকমত বুঝতে পারি না। স্কুলের ভবন তাড়াতাড়ি নির্মাণ করা হলে পাঠ গ্রহণে সুবিধা হত।
প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র নাথ রায় জাগো নিউজকে জানান, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলের সংকট তীব্র রয়েছে। চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে হচ্ছে। এখানে নেই কোন শৌচাগার।
শিক্ষকা শিলা সেন জাগো নিউজকে জানান, এখানে শৌচাগার না থাকায় মেয়ে শিশুদের দুরাবস্থা অবর্নণীয়। প্রায়শই আশপাশের বাড়ি গিয়ে বাথরুমের কাজ সারতে হয় ।
একজন সচেতন অভিভাবক জানান, আমাদের ছেলে মেয়েরা নানা সমস্যা ও চরম ভোগান্তি মধ্য দিয়ে পাঠ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রীকান্ত ঢালী জাগো নিউজকে জানান, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলেও আজও কোন সুরাহা হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, স্কুলটির নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধানের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
একেএম নাসিরুল হক/এসএস/পিআর