তিস্তা হামাক শ্যাষ করি দিল!


প্রকাশিত: ০৭:০৪ এএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৫

যে টুকু ছিল সে টুকুও ভাসি নিয়া গেল। তিস্তা নদী হামাক শ্যাষ (শেষ) করি দিল! হামার কিছুই নাই, ওই দিন রাইতত (রাতে) হঠাৎ কইরা ঘরবাড়ি ভাসি নিগাইছে (নিয়েছে), কোনো কিছু আটকের পাই নাই। এখন ক্লিনিকত ৭ দিন থাকি আছি। এইবার ভায় (সহ) হামার ৪ বার বাড়ি ভাঙ্গি নিগাইল, হামা এখন পথে ফকির বাহে এভাবে কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন উত্তর ডাউয়া বাড়ি গ্রামের দিন মজুর রশিদুল খাঁর স্ত্রী বেবী খাতুন (৩৫)।

বসতভিটা তিস্তার গর্ভে বিলীন হওয়ার পর ৭ দিন থেকে স্থানীয় উত্তর ডাউয়াবাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবারটি আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে রংপুর কারমাইকেল কলেজে বাংলা বিভাগের ছাত্র আর মেয়েটি নবম শ্রেণিতে পড়েন। ছেলে মেয়ের পড়াশুনার খরচ কিভাবে বহন করবেন তা নিয়ে হতাশায় ভুগছেন পরিবারটি।

শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হয়েছে ও আলহাজ্ব আছের মামুদ সরকার নিম্ন মাধ্যমিক দ্বিতল বিদ্যালয়টি ক্রমশ নদীতে হেলে পড়ছে। কয়েক দিনের ভাঙনে রক্ষা পায়নি বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, হাট, মসজিদ, গাছপালা ও ফসলি জমি।

Lalmonirhat-Tista

বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষের অভাবে ৬ দিন ধরে প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২শত ৮৪ জন ছাত্র/ছাত্রী লেখাপড়া করছে। আগামীতে সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৪৮ জন। আলহাজ্ব আছের মামুদ সরকার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ১ শত ৭০ জন ছাত্র/ছাত্রী রয়েছেন।
 
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মনোয়ারা, মোহনা, মিলি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের স্কুল ভেঙে যাওয়ায় আমরা সকলে অনেক কেঁদেছি। বর্তমানে ক্লাশে জায়গা না থাকায় দাঁড়িয়ে এবং মাটিতে বসে ক্লাস করছি। আমাদের স্কুল আমরা আগের মতো চাই।

ডাউয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, শ্রেণি কক্ষ না থাকায় আমরা টিনের চালার ঘর করে কোনো মতো ক্লাস নিচ্ছি। শ্রেণি কক্ষ না থাকায় পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, লালমনিহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৪ শত ৯৪টি পরিবার তিস্তার ভাঙনের শিকার। এদের মধ্যে ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নে ২৯৫টি, সিন্দুনা ৫৪টি, গড্ডিমারী ৯৫টি, পাটিকাপাড়া ৫০টি পরিবার।

তিস্তার ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো কেউবা ক্লিনিকে, কেউবা অন্যের জমিতে, কেউবা রাস্তার ধারে ঈদের পরের দিন থেকে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

Lalmonirhat-Tista

বাচ্চানি বেওয়া (৫০), লাইলি বেওয়া (৬০), মোরশেদা বেওয়া (৪০), রশিদুল খাঁ (৫০), খলিল মিয়া (৪০),মোকছেদুর (৪০), আব্দুস ছোবাহান (৩৮), মফিজার (৩০), সামসুলসহ (৩৮) অনেক পরিবার গৃহীন। বসত-ভিটে হারিয়ে তিস্তা পাড়ের মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে ।  

এদিকে শনিবার বিকেলে উপজেলার উত্তর ডাউয়াবাড়ী তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান সেলিম, প্রকল্প অফিসার ফেরদৌস আহম্মেদ, উপজেলা প্রকৌশলী অজয় কুমার, কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার রহমান বাবলা জাগো নিউজকে জানান, আমরা নদী ভাঙন কবলিত ২৯৫ পরিবারকে জিআরের ৩০ কেজি করে চাউল বিতরণ করেছি। আরো সাহায্যের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি।

হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা (পিআইও) ফেরদৌস আলম  জাগো নিজজকে বলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের নিজ উদ্যোগে তিস্তার ভাঙন রোধে বালির বস্তা ও বাঁশ দিয়ে পাইলিং তৈরি করে ভাঙন রোধ করা হচ্ছে।

রবিউল হাসান/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।