যক্ষ্মা ঝুঁকিতে রাজশাহীর যৌনকর্মীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাজশাহী বিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৩:১০ পিএম, ১১ জানুয়ারি ২০২০
ফাইল ছবি

যৌনকর্মী ও খদ্দেররা যক্ষ্মা ছড়ানোর জন্য অন্যতম উৎস হলেও রাজশাহী শহরের বিপুল সংখ্যক নারী যৌনকর্মী যক্ষ্মা ছড়ানোর এই মারাত্মক বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত নন। তাদের প্রায় অর্ধেক জানেনই না যে যক্ষ্মা সংক্রামক রোগ। ৯০ শতাংশ সুপ্ত যক্ষ্মা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না তারা। রাজশাহী শহরের নারী যৌন কর্মীদের ওপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

গবেষকরা বলছেন, যক্ষ্মা ঝুঁকিতে রয়েছেন রাজশাহী শহরের নারী যৌনকর্মীরা।

গবেষণায় বলা হয়েছে, মোট ২২৫ জন নারী যৌনকর্মীর ৪৩.১ শতাংশ শহর থেকে, ৩৪.৭ গ্রাম থেকে ২২.২ শতাংশ বস্তি এলাকা থেকে আসা। যক্ষ্মা বিস্তার সম্পর্কে জানেন না ৭৬% শতাংশের বেশি নারী যৌনকর্মী। ৪১% এর বেশি অনুভব করেছেন যে যক্ষ্মা একটি অসংক্রামক রোগ। অর্ধেক যক্ষ্মা ছড়ায় এ বিষয়টি জানলেও খুব বেশি গুরুত্ব দেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম হোসেনের তত্ত্বাবধানে ‘Knowledge of tuberculosis among female sex workers in Rajshahi city, Bangladesh: a cross sectional study’ শিরোনামের এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল রাজশাহী নগরীতে নারী যৌনকর্মীদের যক্ষ্মা সম্পর্কিত জ্ঞানের মূল্যায়ন। বিএমসি জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণা সম্পন্ন করেছেন পাঁচ সদস্যের গবেষক দল।

গবেষকরা বলছেন, মূলত দুই ধরনের যৌনকর্মী আছেন। কেউ স্বামী বা পরিবারের নির্যাতনে এই পেশায় আসতে বাধ্য হয়েছেন। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত অর্থ আয়ের জন্য যৌন কর্মের পথ বেছে নিয়েছেন।

যক্ষ্মা সম্পর্কে তাদের জ্ঞান পরিমাপ করা হয়েছে ৬টি ভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে। পরে যক্ষ্মা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের অভাব সংশ্লিষ্ট কারণগুলি খুঁজে বের করার জন্য ‘Chi-square test’ ও ‘multinomial logistic regression mode’ নামের দুইটি টেস্ট ব্যবহার করা হয়।

গবেষকরা দেখেছেন- শিক্ষা, মাসিক পারিবারিক আয়, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা এবং যৌন ট্রেডিং স্থান যক্ষ্মা সম্পর্কিত জ্ঞানের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পৃক্ত। ৪২.২% শতাংশ কিছুটা যক্ষ্মা সম্পর্কে জানেন। তুলনামূলকভাবে শিক্ষিতরা কম শিক্ষিত লোকের চেয়ে যক্ষ্মা সম্পর্কে ধারণা বেশি রাখেন।

যৌনকর্মীদের যক্ষ্মা ঝুঁকি কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে গবেষক ড. গোলাম হোসাইন বলেন, এ শহরে কোনো বৈধ পতিতালয় নেই এ জন্য তারা রাস্তা, বিভিন্ন হোটেল বা বস্তি এলাকার বিভিন্ন স্থানে তাদের যৌনকর্ম সম্পাদন করেন। যার অধিকাংশ জায়গা যক্ষ্মার ঝুঁকি সম্পন্ন। এছাড়া নারী যৌন কর্মীদের কাছে যারা আসেন তারা দূর থেকে ভ্রমণের পর একটা চাহিদা থেকে এটা করেন। অধিকাংশই বাস কিংবা রিকশা ড্রাইভার। যৌনকর্মীরা সচেতন না হওয়ার অসচেতনভাবেই এসব স্থান ও ব্যক্তিদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদনের কারণে যক্ষ্মার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সে কারণেই তাদের সচেতনতার প্রয়োজন ।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. নাজিব ওয়াদুদ বলেন, এইচআইভি সম্পর্কে একটু সচেতন হলেও সংক্রামক এই রোগটি সম্পর্কে যৌনকর্মীরা জানেন না, এটা খুব মারাত্মক বিষয়। যদিও তারা এবং তাদের ক্লায়েন্টরা যক্ষ্মা ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা এটি। সরকার, সংশ্লিষ্ট বিভাগ, এনজিও এবং গবেষকরা যৌথভাবে বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগের প্রকোপ কমাতে সহায়তা করতে পারে।

সালমান শাকিল/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।