বিনামূল্যের বই দিতে নিচ্ছে ৮০০ টাকা
নেত্রকোনার মদন উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮০০ টাকা ছাড়া শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের বই দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে নতুন বই আনতে গিয়ে না পেয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছে। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা এটি।
স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, গোবিন্দশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশ।
গত বুধবার (০১ জানুয়ারি) সারা দেশে বিনামূল্যের নতুন বই বিতরণ উৎসব শুরু হলেও গোবিন্দশ্রী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ৮০০ টাকা ছাড়া শিক্ষার্থীদের বই দেয়নি। আর্থিকভাবে যারা সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থী কেবল তারাই নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে নতুন বই পেয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী টাকা না দিতে পারায় বিদ্যালয় থেকে বিনামূল্যের বই দেয়া হয়নি। এতে করে বঞ্চিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির আলী হোসেন, সপ্তম শ্রেণির শেখ মোস্তাকিম, মোকাব্বের আলী খান ও শেখ সামিউল হাসান, ষষ্ঠ শ্রেণির মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দ মাখমুদুল হাসানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাষ্য, বছরের প্রথম দিন সকালে বিদ্যালয়ে নতুন বই আনতে গিয়ে বই পাইনি। শিক্ষকরা জানিয়ে দেন ৮০০ টাকা ছাড়া বই দেয়া হবে না। তাই বই না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে আমাদের। এজন্য মন খারাপ।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হাসেম মিয়া বলেন, আমি গরিব মানুষ, মানুষের জমি চাষবাদ করে সারাদিন যা পাই তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতে হয়। ছেলেটি বাড়িতে এসে নতুন বই না পেয়ে মন খারাপ করে বলেছে ৮০০ টাকা না দিলে স্কুল থেকে বই দেয়া হবে না। এত টাকা এখন কোথায় থেকে জোগাড় করব আমি।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুর রহমান আকন্দ বলেন, টাকা নিয়ে বই দেয়া হচ্ছে এ কথাটা আপনি ঠিক বলেননি। বইয়ের জন্য কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি খসরু মিয়াসহ সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেজুলেশন করে ভর্তির জন্য ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই টাকা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ধরা হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে। উপজেলায় আমরাই সবচেয়ে ভর্তির জন্য কম টাকা নিচ্ছি। ভর্তির আগে বই দিলে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়। দেখা যায়, বই নিয়ে শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এজন্য কেউ কেউ বই পায়নি।
জেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গফুর বলেন, টাকা নিয়ে বই দেবে এটা নিয়মের মধ্যে পড়ে না। তবে অনেকাংশে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা এক বিদ্যালয় থেকে বই নিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেজন্য হয়তো শিক্ষকরা কৌশল অবলম্বন করে ভর্তির টাকা নিয়ে বই দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওয়ালীউল হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। সরকার বিনামূল্যে বই দিচ্ছে- এটাকে পুজি করে ভর্তির টাকা আদায় করা ঠিক নয়।
কামাল হোসাইসন/এএম/এমকেএইচ