শীতে বিক্রি বেড়েছে ‘গরিবের মার্কেটে’
সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। শীতের এ তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে জেলা সদর ও আদালত এলাকায় পুরাতন শীতবস্ত্রের মার্কেট। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের শীতের কাপড়ের চাহিদা মেটাতে এই মার্কেটে বসেছে তিন শতাধিক দোকান। নিম্ন আয়ের ক্রেতারা কম দামে গরম কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন রাস্তার পাশে ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পরিত্যক্ত জায়গায় অস্থায়ী ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ওই মার্কেটের দোকানগুলোতে।
এ এলাকাগুলোতে প্রতি বছর হেমন্তের শুরুতে মৌসুমি শীতবস্ত্রের বাজার বসে। এবারও বসেছে। কম দামে শীতবস্ত্র পাওয়ার আশায় ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছেন এই দোকানগুলোতে। বাজার জমে উঠলেও গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় প্রতি বেলে তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এই অতিরিক্ত টাকা দেয়ার পরও তাদের কিনতে হচ্ছে নিম্ন মানের বেল, যা বিক্রি করে মূলধন আর যাতায়াতের খরচই উঠানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
টাঙ্গাইলের শীতের পুরাতন কাপড়ের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন সরকারি পরিত্যক্ত জায়গা আর আদালত চত্বর এলাকায় তিন শতাধিক দোকান বসেছে। এখানকার প্রতিটি দোকানই শীতের কনকনে ছোঁয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গেই জমে উঠেছে কেনাকাটা। এ মার্কেটটি মূলত ‘গরীবের মার্কেট’ হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন প্রতিটি দোকানে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পৌষ আর মাঘ মাসের হাড় কাঁপানো শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে গরম কাপড় ক্রয়ের জন্য ঝুঁকছেন মানুষ। উচ্চ আয়ের মানুষেরা বিভিন্ন নামীদামি মার্কেট থেকে বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় কিনতে পারলেও নিম্ন আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা টাঙ্গাইল আদালত চত্বর আর জেলা সদরের হকারদের বিক্রি করা গরম কাপড়। জেলা প্রশাসন ও আদালতে প্রয়োজনীয় কাজে আসা মানুষগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণে হকাররা নানাভাবে হাক-ডাক দিচ্ছেন।
পৌর এলাকার গৃহিণী মাহবুবা আকতার, হালিমা বেগম, মাজেদা খাতুন, দেলদুয়ারের জাহাঙ্গীর হোসেন, আলম মিয়া, রবিন খান, বাসাইল উপজেলার আজমত আলী, লোকমান হোসেনসহ অনেক ক্রেতাই জানান, গত বছর নারীদের যে পাতলা সোয়েটার ১০০-১২০ টাকা দাম ছিল, এবার শীত আসার শুরুতেই তা কিনতে লাগছে ১৫০-২০০ টাকা। খুব প্রয়োজন ও শীত নিবারণের জন্য বাধ্য হয়েই তারা চড়া দামে এসব কাপড় কিনছেন।
শহরের কলেজ পাড়ার গৃহিণী রোকেয়া বেগম, জাকিয়া সুলতানা ও কলেজছাত্রী ইসরাত জাহান জানান, শিশুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের শীত নিবারণ আর ঘরে পরার জন্য অল্প দামে গরম কাপড় কিনতে এসেছেন তারা। কিন্তু যে দাম দেখছেন তাতে এই মার্কেট থেকেও তাদের কাপড় কেনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী রজিব মিয়া, মো. মাখন মিয়া জানান, গত বছর পুরাতন শীতের কাপড়ের যে বেল চট্টগাম থেকে সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকায় আনা যেত, এ বছর সেই বেল আনতে লাগছে সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা। তুলনায় দুই থেকে আড়াই হাজার এবং আরো একটু মান সম্মত বেলে ৪-৬ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর বেলের দাম বৃদ্ধি পেলেও কাপড়ের মান অন্য বছরের তুলনায় নিম্নমানের। যা ভেঙ্গে বিক্রি করে চালানের টাকা তোলা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। কেননা এই মার্কেটে যারা কেনাকাটা করতে আসেন তারা সস্তা আর অল্প টাকার ক্রেতা। এ কারণে কেনা ও বেচা উভয়ই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে বলেও জানান তারা।
স্থানীয় কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, আমরা সাধারণত সোয়েটার, জ্যাকেট, ট্র্যাকসুট, বিভিন্ন ধরণের গরম জামা, মোজা, টুপি, বাচ্চাদের কাপড়, কোট-প্যান্ট, চাদর, কম্বল, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন ধরনের শীতের কাপড় বিক্রি করে থাকি। আমরা চট্টগ্রামের আমিন মার্কেট থেকে বেল হিসেবে এসব শীতের কাপড় নিয়ে আসি। বিভিন্ন ধরনের বেল বিভিন্ন রকমের দাম। সোয়েটারের ছোট বেল ১০ হাজার টাকা, ট্র্যাকসুট ২২হাজার টাকা, ব্যাগ ২৩ হাজার টাকা, বড় সোয়েটার ১৯ হাজার। বেল ভাঙার পর কাপড়গুলোর একটা গড় মূল্য নির্ধারণ করার পর আমরা বিক্রি শুরু করি। খরচ বাদে যা থাকে তাতে মোটামুটি ভালই লাভ হয়।
বিক্রেতারা আরও জানান, এ বছর বেলের দাম বাড়ার কারণে বেচাকেনা কমে গেছে। সাধারণ গ্রাহকদের ধারণা, ব্যবসায়ীরা মনগড়া দাম চাইছে। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত একটি বেল আনা ও যাতায়াতসহ প্রতি বেলে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ বেশি হওয়ায় মালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তাদের প্রশ্ন- রোদে পুড়ে ও কষ্ট করে প্রতি বেলে এক হাজার টাকার ব্যবসা না হলে তারা বাঁচবেন কীভাবে?
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেলা হকার্স লীগের সভাপতি মো. বাদশা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবলু মিয়া জানান, তারা সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় দোকান করে জেলার সাধারণ মানুষের সেবার পাশাপাশি নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন। এখান থেকে জেলার ১২টি উপজেলার মানুষ সস্তায় শীতের কাপড় কিনে থাকেন। পরিত্যক্ত স্থানে দোকান বসানো হলেও মাঝে মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ করার কথা বলা হয়, যা তাদের কাম্য নয়। সরকারের প্রয়োজনে যেকোনো সময় এসব অস্থায়ী দোকান সরিয়ে দেয়া যাবে। তাই অহেতুক হকারদের উচ্ছেদ না করার দাবি জানান তারা।
আরিফ উর রহমান টগর/এমবিআর/এমকেএইচ