এখনও শুরু হয়নি ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ, শঙ্কায় কৃষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
হাওরের পানি নেমে যাওয়ায় বীজতলা তৈরিসহ চাষাবাদের কাজ শুরু হয়েছে অনেক এলাকায়। এখনও অনেক হাওরে রয়ে গেছে পানি

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নীতিমালা অনুযায়ী নেত্রকোনায় এখনও শুরু হয়নি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ। যদিও গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কিন্তু আজ (২০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিই (পিআইসি) গঠন করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় পাউবো জানিয়েছে, হাওরের পানি ধীর গতিতে নামায় পিআইসি গঠন করা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে ইতোমধ্যে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে এ বছর নেত্রকোনায় মোট ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলার কয়েকটি হাওর ছাড়া বেশির ভাগেই পানি সময়মতো কমেছে। কিন্তু এখনও বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় বোরো ফসল হুমকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

এদিকে জেলা পাউবো জানিয়েছে, হাওরে পানি না কমায় পিআইসি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। এবার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে। যা গত বছরে ছিল ১৬ কোটির টাকারও বেশি।

Netrokona-2

হাওরের পানি নেমে যাওয়ায় বীজতলা তৈরিসহ চাষাবাদের কাজ শুরু হয়েছে অনেক এলাকায়। এখনও অনেক হাওরে রয়ে গেছে পানি

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, নেত্রকোনায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৩৪টি হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়। এরমধ্যে ৭৯টি হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হয়। এর মধ্যে খালিয়াজুড়ীতে ১৯ হাজার ৭৮০ হেক্টর, মদনে ১৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর এবং মোহনগঞ্জে ১৭ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হবে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৬২ মেট্রিক টন।

জেলা হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি স্বাগত সরকার শুভ বলেন, এবার অধিকাংশ হাওরে সময়মতো পানি নিষ্কাশন হয়েছে। কৃষকরাও চাষাবাদ শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। ফলে দুশ্চিন্তায় আছেন স্থানীয় কৃষকরা। দ্রুত ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হলে আগাম বন্যায় বছরের একমাত্র ফসল ঝুঁকিতে পড়বে।

খালিয়াজুড়ী উপজেলার পুরানহাট গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, ‘পানি দেরিতে নামার কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও পানি আসার আগে তড়িঘড়ি করে বাঁধের কাজ শুরু হলে বছরের একমাত্র ফসল হারাতে হবে। যে স্থানে হাওর শুকিয়েছে সেখানে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে। নয়তো ২০১৭ সালের মতো ফসলহানির আশঙ্কা থাকবে। ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট নয়বার আগাম বন্যায় ফসলহানির ঘটনা ঘটেছে।

জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রতিবছর ইচ্ছে করেই দেরিতে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। পানি আসার আগে আগে এসব কাজ করে সরকারের টাকা তছরুপ করা হয়। এজন্য প্রতিবছর আগাম বন্যায় হাওরের একমাত্র ফসল ডুবে যায়। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে বাঁধগুলো নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

খালিয়াজুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, মোট ৩৬টি পিআইসির সবগুলোরই কমিটিই গঠন করা হয়েছে। সেগুলো অনুমোদিত হলেই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, হাওরের পানি নামতে দেরি হচ্ছে। পলে সময়মতো পিআইসি কমিটি করা যায়নি। খালিয়াজুড়ীতে পিআইসি কমিটি তৈরি শেষ হয়েছে, তবে সেগুলো এখনও হাতে পাইনি। সবাইকে দ্রুত পিআইসি গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিটি হাতে পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।

কামাল হোসাইন/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।