কমান্ডারসহ ৫ মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায়, বিক্ষোভ
ঝালকাঠি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সৈয়দ শামসুল আলম এবং রাজাপুর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য এনায়েত হোসেন খান মিলুসহ পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় থাকার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজাপুর প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ড ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
পরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ঝালকাঠি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার দুলাল সাহা, খন্দকার শফিউল আলম, নূরুল ইসলাম খলিফা, রাজাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এনায়েত হোসেন খান মিলু ও ইউনিয়ন কমান্ডার আলতাফ হোসেন।
সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকার লজ্জা জাতি কখনো ভুলতে পারবে না। রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পদত্যাগ চাই আমরা। একই সঙ্গে জাতির কাছে তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাই।
পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন মুক্তিযোদ্ধারা।
পাঁচ মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় থাকায় ইউএনওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি
মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, সাবেক কমান্ডারসহ পাঁচ মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় দেখে ক্ষুব্ধ হন তারা। রাজাকারের তালিকার ১৪২ নম্বর ক্রমিকের ১ নম্বরে রয়েছে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক মৃধার নাম, ২ নম্বরে রয়েছে মতিউর রহমানের নাম, ৩ নম্বরে দবির উদ্দিন খানের নাম, ৪ নম্বরে সৈয়দ শামসুল আলমের নাম, ৫ নম্বরে এনায়েত হোসেন খান মিলুর নাম। অথচ এরা সবাই রাজাপুরের মুক্তিযোদ্ধা।
এদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল আলম ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার। তিনি ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এছাড়া রাজাপুরের এনায়েত হোসেন খান মিলু ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এবং বর্তমান যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য।
এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত রাজাকারদের তালিকা অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাহার এবং সংশোধনের দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধারা।
ঝালকাঠি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার দুলাল সাহা বলেন, রাজাকারের এই তালিকা গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে প্রকৃত রাজাকারদের নামসহ নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেবেন মুক্তিযোদ্ধারা।
নানা বিতর্কের মুখে রাজাকারের তালিকা স্থগিত করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করা হবে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমান জাগো নিউজকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিজয় দিবসের আগের দিন রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে ঘোষিত তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর ও ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপুসহ রাজশাহীর আরও দুই ব্যক্তির নাম রয়েছে ওই তালিকায়, যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে। এ নিয়ে সারাদেশে সমালোচনা শুরু হয়।
আতিকুর রহমান/এএম/পিআর