উদ্বোধনের আগেই মাঝখান দিয়ে ফাটল সাড়ে ৪ কোটি টাকার সেতু

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৮:৪৭ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

শরীয়তপুর সদর উপজেলার কীর্তিনাশা নদীতে নির্মাণাধীন চার কোটি ৬২ লাখ টাকার সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ফাটলের ওই স্থানটি সংস্কার করেছেন। শ্রমিকদের অবহেলার কারণে সেতুর মেঝের ঢালাইয়ের একটি অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর শরীয়তপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের নতুনহাট সংলগ্ন উত্তর ভাসানচর ও দক্ষিণচর এলাকার কীর্তিনাশা নদীতে ৯৯ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে সাত মিটার প্রস্থের একটি সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। ফরিদপুর গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।

সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত বছরের ৩১ জুন হামীম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সেতু নির্মাণের কাজ দেয়া হয়। সেতুর নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে। সেতুর স্লাব বসানোর পর তার ওপর মেঝেতে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পুরু ঢালাই দিতে হয়।

গত সেপ্টেম্বর মাসে সেতুর মেঝেতে স্লাবের ওপর ঢালাই দেয়া হয়। ঢালাই দেয়ার তিন-চার দিন পরই সেতুর উত্তরপ্রান্তে ৩৩ মিটার অংশজুড়ে মাঝখান বরাবর ফাটল দেখা দেয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর উত্তরপ্রান্তের মাঝখান দিয়ে ফাটল। সেটি সংস্কার করা হচ্ছে। তিনজন নির্মাণ শ্রমিক সিমেন্ট ও বালু দিয়ে ফাটল সংস্কার করছেন। ফাটলের গভীরতা এক ইঞ্চির বেশি।

নির্মাণ শ্রমিক সবুজ হাওলাদার বলেন, কোন নির্মাণ শ্রমিক সেতুর কাজ করেছেন তা আমি বলতে পারব না। সেতুর স্লাবের ওপর ঢালাইয়ে ক্রুটি ছিল। এ কারণে ফাটল ধরেছে। এখন এটি সংস্কার করা হয়েছে। বেশি করে সিমেন্ট দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে, পরবর্তীতে আর কোনো সমস্যা হবে না।

সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের দাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব মাদবর বলেন, নির্মাণের সময় সেতুতে দিনে-রাতে ঢালাই দেয়া হয়েছে। ঢালাই দেয়ার সময় সরকারি প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন না। ঢালাইতে সিমেন্ট কম দেয়ায় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। উদ্বোধনের আগেই যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে সহজেই বোঝা যায় কেমন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

ভাসানচর গ্রামের বাবু মিয়া বলেন, সেতুর কাজ শেষ হতে না হতেই ফাটল ধরেছে। সেতুর উপরের মেঝের বিভিন্ন স্থানে লাঠি এবং কাঁচি দিয়ে আঁচড় কাটলে ভেতর থেকে বালু ওঠে। মনে হচ্ছে কোনো সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। সেতুর কাজ মোটেও ভালো হয়নি। বেশিদিন টিকবে না এই সেতু।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হামীম ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসায়ী অংশীদার ও সেতুর নির্মাণকাজ তদারককারী আব্দুল ওহাব বলেন, সেতুর ফ্লোরে ঢালাই দেয়ার তিন-চার দিন পর শ্রমিকরা সেতুতে একটি ভারী এক্সকাভেটর তুলেছিল। তখনো ঢালাই মজবুত হয়নি। মেশিনের ভারে সেতুতে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পুনরায় তা সংস্কার করেছি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী শাহ আলম মিয়া বলেন, ওই ঢালাই সেতুর উপরের ভাগের একটি ফাইনাল প্রলেপ। নির্মাণ শ্রমিকরা ঢালাইয়ের কাজটি একসঙ্গে করেননি। দু-তিন দফায় করার কারণে সেতুর সিমেন্ট-বালু জমাট বাঁধেনি। ফলে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঢালাইয়ের কাজে শ্রমিকদের অবহেলা ছিল। তবে ফাটলের কারণে সেতুর কোনো ক্ষতি হয়নি। আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেতুর ফাটল সংস্কার করা হয়েছে।

মো. ছগির হোসেন/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।