গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ১১:৩৩ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯
অগিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের আহাজারি

গাজীপুরে ফ্যান তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার রাতে গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম বিষয়টি জানান।

তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের মরদেহ দাফন ও পরিবহনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা প্রদান করা হবে।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশোরিতা এলাকার লাক্সারি ফ্যান তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ শ্রমিক নিহত ও অন্তত ‌১৫ জন আহত হন।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার কেশোরিতা এলাকার লাক্সারি ফ্যান কোম্পানি লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন।

jagonews24

ঘটনার পর পর গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম ও জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রীনা পারভীন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাকি, র‌্যাব গাজীপুর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রংপুরের মো. ফরিদুল ইসলাম (১৮), গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মারতা এলাকার রাশেদ (২৫), মো. শামীম (২৬), কেশরিতা এলাকার খলিল (২২) ও উত্তম (২৫)।

আহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- কেশরিতা এলাকার আনোয়ার হোসেন ও সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের জামুনা গ্রামের মো. হাসান মিয়া। তাদেরকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আগুনের সূত্রপাত। পরে তাদের স্টেশনের চারটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে দ্বিতীয় তলার উপর নির্মিত টিন সেডে অভ্যন্তরে ১০ শ্রমিকের মরদেহ দেখতে পান তারা।

তিনি আরও জানান, প্রথমে দ্বিতীয় তলার ছাদে তৈরি করা টিন সেডের ঘরের দরজার কাছে আগুনের সূত্রপাত হলে শ্রমিকরা আত্মরক্ষায় ভেতরের দিকে চলে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে শ্রমিকরা আটকা পড়েন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর টিন সেড কক্ষ থেকে ১০ শ্রমিককের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আগুন লাগার সঠিক কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার দ্বিতীয় তলার ছাদে তৈরি করা টিন সেডে ১৯ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। নিহতদের মধ্যে ৫ জন ও আহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে কারখানা মালিকের নাম মো. জাহিদ হাসান ঢালী বলে জানা গেছে। প্রাথমিক আলামত দেখে মনে হচ্ছে ১০ জনই ধোঁয়ায় শ্বাসসরুদ্ধ ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

শহীদ তাউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষন দাস জানান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ স্থানীয় কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ও জামুনা এলাকার আব্দুল মোতালেববের ছেলে মো. হাসান ভর্তি আছেন।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৬ সালে কারখানাটি একটি ফ্ল্যাট বাসার মধ্যে ওই এলাকায় গড়ে ওঠে। দুতলা ভবনের ছাদে একটি টিন সেড রয়েছে। ওই সেডে কারখানার আর্মেচার সেকশন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ওই সেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।

ওই সেকশনের শ্রমিক ফয়সার জানান, পুরো কারখানায় ৮০ জনের মতো শ্রমিক ছিল। আর কারখানার যে সেকশনে আগুন লাগে সেখানে ১৯ জন শ্রমিক কাজ করছিল।

লাক্সারি ফ্যান কাখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হাসান ঢালী জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এছাড়া নিহত শ্রমিকরা কারখানা থেকে যে বেতন ভাতা ও ঈদ বোনাস পেতেন তাদের পোষ্যদের আজীবন সে সব সুবিধাদি প্রদান করা হবে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার দেশ জানান, কারখানাটি নির্মাণে অব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। কারখানাটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি থাকায় শ্রমিকরা বের হতে পারেনি। তারা আগুন থেকে বাঁচার জন্য টিন সেড ঘরের এক কোনায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা ধোঁয়ায় শ্বাসরোধে ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়।

রাত ১০টার দিকে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্বজনরা লাশ শনাক্তের জন্য হাসপাতালে ভিড় করছেন। লাশের মুখমণ্ডল ও দেহ আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় শনাক্ত করতে স্বজনদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মো. আমিনুল ইসলাম/এমএসএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।