এনআরসি আতঙ্ক, গরুর সঙ্গে বাংলাদেশে ঢুকছে মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) আতঙ্কে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ থামছেই না। নির্যাতনের ভয়ে প্রতিদিনই ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে মানুষ। অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে টহল জোরদার করলেও তাদের ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে অনুপ্রবেশকারীরা। গত নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢোকার সময় ৩২৫ জনকে আটক করেছেন খালিশপুরস্থ ৫৮ বিজিবির সদস্যরা।

ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারীরা জানান, বিজেপি’র লোকজন বলছে তোমরা এদেশে থাকতে পারবা না, বাংলাদেশে চলে যাও। কখনও রাস্তার পাশে থাকলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, বাড়ি ঘর ভেঙে দিচ্ছে। ভারতে বেশিদিন থাকতে পারব না।, কখন কী হয় এই ভয়ে আমরা এদেশে চলে আসছি।

ভারতের মেদিনীপুর ও বেঙ্গালুরু থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মাসুম ও ফয়সাল হাওলাদার বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল খুলনা জেলায়। সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে অনেক আগে কাজের জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। স্থানীয়দের নির্যাতনসহ আমরা দীর্ঘদিন বেতন পাই না। ফলে ভারতের এক দালালের মাধ্যমে ৮ হাজার টাকায় চুক্তি করি। দালালরা আমাদের গরুর সঙ্গে সীমান্ত পার করে দিয়েছে। আগে তিনটা গরু পার হয়েছে তারপর আমরা পার হয়েছি। কাঁটাতার পার করে দালালরা বলেছে-‘ তোরা গরুর সঙ্গে নদী পার হয়ে সোজা হাঁটতে থাকবি।’ এপারে এসে আমরা বিজিবির হাতে আটক হয়েছি।

Jhenidah-BGB-Tohol

মহেশপুর সীমান্তের বাঘাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, নদীর ওপারে ভারত-এপারে বাংলাদেশ। সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরে নদীর-কোল ঘেঁষে প্রচুর কলাবাগান। বাগানেরও প্রায় দেড়শ গজ ভেতরে কাঁটাতার। দালালের মাধ্যমে বিএসএফের সহযোগিতায় কাঁটাতার পেরিয়ে রাতে লোকজন ভারত থেকে আসছে। সকালে দেখা যায় ভেজা কাপড় পড়ে আছে। যখন বিজিবি থাকে না তখন সীমান্ত পার হয়ে তারা আসে।

সীমান্তের সেজিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক শওকত আলী জানান, ভোররাতের দিকে ভারত থেকে লোক আসে। সকাল বেলায় নামাজ পড়তে উঠলে দেখা যায় ভারত থেকে আসা লোকজন, নসিমন, মাহিন্দ্রসহ নানাভাবে দেশের ভেতরে ঢুকছে। যে পরিমাণ ধরা পড়ে তার থেকে অনেক বেশি লোক দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।

জুলুলী, বাঘাডাঙ্গা ও খোশালপুর এলাকার বাসিন্দারা বলেন, অনেকেই আছে যারা স্বাধীনতার পর বা তারও অনেক পরে বাংলাদেশ থেকে তাদের জমিজমা বিক্রি করে ভারতে চলে গিয়েছিল। এরা আবার দেশে এভাবে আসতে থাকলে তো সরকার বাংলাদেশে জায়গা দিতে পারবে না। সরকারের উচিত অনুপ্রবেশ ঠেকানো। আমরা স্থানীয়ভাবে কিছু করবো তাও করার উপায় নেই। বিজিবি কাউকে কোনো তথ্যও দিতে দেয় না। তথ্য দিলেই হয়রানি করে।

মহেশপুরের সীমান্তবর্তী নেপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এলাকার মানুষকে সচেতন করবো এমন কোনো নির্দেশনা সরকার আমাদের দেয়নি। ফলে কিছু করতেও পারছি না। সরকারি নির্দেশনা এলে আমরা সবাই মিলে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবো।

Jhenidah-BGB-Tohol

খোশালপুর গ্রামের দফাদার (গ্রাম পুলিশ) জাহিদুল ইসলাম জানান, মাঝে বিজিবির টহলের কারনে অনুপ্রবেশ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এখন আবার বেড়েছে।

ঝিনাইদহ-৫৮ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল আহসান বলেন, বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটলেও জুলুলী বিওপি সংলগ্ন এলাকাকে সব থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কেননা এই অংশেই কাঁটাতার নেই। তাই জুলুলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার করেছি। তবে যারা অনুপ্রবেশ করছে তারা সকলেই বিভিন্ন সময় কাজের সন্ধানে কিংবা চিকিৎসার জন্য ভারতের গিয়েছিল।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস বলেন, যারা আটক হচ্ছে তারা সকলেই বাংলাদেশি। বিজিবি সীমান্ত থেকে পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় ঢুকে পড়া লোকদের ধরে থানায় সোপর্দ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।