অপহৃতই যখন অপহরণকারী


প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মাদারীপুরে নিজ পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা ও অপহরণ নাটক করে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে আজিজুল হক মীর নামে এক ব্যক্তি। পুলিশ কথিত ওই অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।

পারিবারিক সূত্র ও পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা হতে ভেদরগঞ্জে মোকাম করে আসার সময় আজিজুল হক মীর (৪২) নামের এক মুদি দোকানদারকে অজ্ঞান করে অপহরণ করা হয়েছে এই মর্মে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তার পরিবার।

অপহৃতের পরিবার আরো জানায়, অপহরণের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার মুঠোফোন বন্ধ ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে অপহৃত আজিজুল নিজের মুঠোফোন থেকে শ্যালক আবুল কালাম ও স্ত্রীর নিকট কান্না জড়িত কণ্ঠে জানায়, তাকে শরীয়তপুর ভেদরগঞ্জ থেকে নাকে রুমাল দিয়ে মুখ বেঁধে অজ্ঞান করে ধরে নিয়ে এসেছে অপহরণকারীরা। তাকে একটি বদ্ধ ঘরের মধ্যে তারা আটকে রেখেছে। তাছাড়া একদিন আগে হুমকি দিয়ে বাড়িতে চিঠিও দিয়েছে। অপহরণকারীদের ৩ লাখ টাকা দিতে হবে, না দিলে আমাকে মেরে ফেলবে।

এ ব্যাপারে কথিত অপহৃত আজিজুলের শ্যালক আবুল কালাম ভেদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। শরিয়তপুর সার্কেলের এএসপি সমুন দেব এর নির্দেশে শরীয়তপুর জেলা সিআইডির এএসআই নিউটন দত্ত তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযান শুরু করেন। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্য আজিজুলের অবস্থান নিশ্চিত হন। পরে ভেদরগঞ্জ থানার এসআই ওলিয়ার, এএসআই বজলুর রহমান ও সিআইডির এএসআই নিউটন দত্ত সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান শুরু করে।

এদিকে, পুলিশ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুর রাজৈর টেকেরহাট একটি বিকাশের দোকান হতে মুক্তিপণের টাকা নেয়ার চেষ্টাকালে অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেন। কিন্তু এ সময় অপহৃতের শ্যালক আবুল কালাম পুলিশে সঙ্গেই ছিল। তখন তিনি বলেন, টাকা গ্রহণকারী ওই ব্যক্তিই তার দুলাভাই আজিজুল হক। তাকেই অপহরণ করা হয়েছে।

মুক্তিপণের টাকা আপনি নিতে এসেছেন কেন পুলিশের এমন প্রশ্নের জবাবে কথিত অপহৃত আজিজুল জানায়, আমাকে দোকানে রেখে ওরা (অপহরণকারীরা) আশে-পাশেই আছে। কিন্ত পুলিশের ব্যাপক জিঞ্জাসাবাদে আজিজুল জানায়, আশে-পাশে কেউ নেই।  তিনি নিজেই অপহরণের কল্প কাহিনী তৈরী করেছেন। তার উদ্দেশ্য পরিবারের কাছে অপহরণের গল্প বানিয়ে শ্বশুর বাড়ি ও প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নেয়া।

আজিজুল শরিয়তপুর জেলার ডাম্যুডা উপজেলার সিদ্যা গ্রামের মৃত সাহাবুদ্দিন মীরের ছেলে বলে পুলিশ জানায়। সিদ্যা গ্রামের আমিন বাজারে তার মুদির দোকান আছে।

সিআইডির এসআই নিউটন দত্ত জাগো নিউজকে জানান, বুধবার সকালেও উদ্ধারের ৩০ মিনিট আগে আজিজুল তার শ্যালককে বলে, অপহরণকারীরা আমাকে একটি নদীর মধ্যে এনেছে জবাই করতে, তাদের কাছে টাকাই বড়, আমাকে টাকা দিয়ে বাঁচাও। এ সময় নদীতে ট্রলারের শব্দ পাওয়া যায়। তখন তিনি নদীর কাছাকাছি ছিলেন বলেন আজিজুল স্বীকার করেন।

অপহরণ নাটকের এই কাহিনীর কারণ হিসেবে জানা যায়, আজিজুলের ব্যবসায়ে অনেক বাকি পড়েছে। আর এ কারণে তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। বর্তমানে তার ৭ লাখ টাকা দেনা আছে। এ কারণে তিনি অপহরণের নাটক সাজান। এ প্রতারণার ঘটনা  জানাজানির পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।

একেএম নাসিরুল হক/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।