ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে প্রভা, এখনও প্রয়োজন ৭-৮ লাখ টাকা
যখন খেলাধুলা করে ব্যস্ত থাকার কথা তখন হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে প্রভা। বাবাও নিজের একমাত্র সন্তানকে বাঁচাতে নিজের গচ্ছিত সব টাকাও খরচ করে ফেলেছেন। তবুও সুস্থ হয়নি সে। বরং চিকিৎসার পেছনে আরও সাত-আট লাখ টাকা প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসক।
বাবা একটি এনজিওতে চাকরি করতেন, এখন সেটিও নেই। মেয়ের চিকিৎসায় নিরুপায় হয়ে পড়েন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের বারাত গ্রামের সদয় দাস। পাঁচ বছরের মেয়েটিকে নিয়ে ভারতের ভেলোরের হাসপাতালে রয়েছেন তিনি।
খুলনা, ঢাকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ক্যান্সার হয়েছে জানিয়ে দ্রুত ভারতে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। গত ১৭ নভেম্বর প্রভাকে ভারতের ভেলোরে নিয়ে যান বাবা। এ পরিস্থিতিতে দিশেহারা শিশু সেজুতি দাস প্রভার মা জোসনা রানী দাস। গত ২৮ নভেম্বর দুপুরে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হন তিনি। নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও আন্তরিক হয়ে প্রভাকে সুস্থ করতে শুরু করেন টাকা জোগাড়ের প্রচারণা। এ ঘটনায় ওই দিনই ‘বাবার চাকরি নেই, অভাবে কেমো বন্ধ হয়ে গেছে মেয়ের’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর হৃদয়বানরা যোগাযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। তুলে দেন আর্থিক সহায়তা। কেউবা বিকাশের মাধ্যমেও সহযোগিতা পাঠান। এখন পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন তারা। টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন তুলে দেন শিশু প্রভার মা জোসনা রানীর হাতে।
প্রভার জন্য সহায়তা দিয়েছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানও। প্রভার মা জোসনা রানী জাগো নিউজকে বলেন, দুটো কেমো থেরাপি, এক ব্যাগ সাদা রক্ত দেয়া হয়েছে। প্রভা এখন অনেক সুস্থ। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে তাদের দেখাতে হবে। চার মাসে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। বলেছে, সাত মাসও লাগতে পারে পুরোপুরি সুস্থ হতে। আগে উঠে বসতে পারত না প্রভা। এখন কথা বলা, উঠে বসতে পারছে, খেতে পারছে। আগে পারত না।
তিনি আরও বলেন, ভারতের ভেলোরের হাসপাতালের পাশে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে আগামী তিন বা চার মাস প্রভাকে দেখাব। এরপর প্রভা ভারত থেকে বাড়ি ফিরবে সুস্থ হয়ে। মেয়েকে বাঁচানোর জন্য টাকার কোনো উপায় হচ্ছিল না। সে সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন স্যারের কাছে গেলে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন টাকার জন্য প্রভার কিছু হবে না। আমরা চেষ্টা করব টাকা জোগাড় করার। এখন পর্যন্ত আমি এক লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। সে টাকা সব ভারতে প্রভার চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। এসপি স্যার ডেকে নিয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন প্রভার চিকিৎসার জন্য। ভারতের চিকিৎসক বলেছেন, সব মিলিয়ে সাত-আট লাখ টাকা খরচ হবে।
প্রভার চিকিৎসার বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রভার চিকিৎসার জন্য তার মায়ের হাতে এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমার হাতে এখনও ১০ হাজার টাকা রয়েছে। আশার কথা হচ্ছে, প্রভা ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে।
‘জাগো নিউজের সংবাদসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদের কারণে বহু হৃদয়বান মানুষ যোগাযোগ করেছেন, সহযোগিতা দিয়েছেন। যারা সহযোগিতা দিয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, তবে এখনও অনেকটা পথ বাকি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রভাকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরানো পর্যন্ত এখনও তার সঙ্গে আমাদের থাকতে হবে। সেজন্য হৃদয়বান মানুষদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রভাকে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে (০১৩০১৮২৯৭৭৭)। নম্বরটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের, তত্ত্বাবধায়ন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন।
আকরামুল ইসলাম/এমএআর/পিআর