স্কুলে ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস লাগানো নিয়ে টিইও-এটিইও’দের সিন্ডিকেট
ফরিদপুর সদর উপজেলায় সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলোতে বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে প্রধান শিক্ষকদের বাধ্য করছেন থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) এবং সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট।
অভিযোগ উঠেছে বাজারে আরও দু’তিনটি কোম্পানি একই ডিভাইস ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকায় স্কুলগুলোতে স্থাপন করতে সম্মত থাকলেও শিক্ষা কর্মকর্তাদের পছন্দের একটি প্রতিষ্ঠান ১৯ হাজার টাকায় স্কুলগুলোতে স্থাপন শুরু করেছে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন।
সরেজমিনে চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ইউনিক আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস স্কুলে স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক রিজিয়া বেগম জানান, ফরিদপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) এবং সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) পরামর্শে তারা ডিভাইসটি লাগিয়েছেন।
ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জানান, গত ১১ নভেম্বর প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভায় টিইও আবু আহাদ মিয়া সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো কোম্পানির লোক স্কুলে গিয়ে টিইও, এটিইওদের রেফারেন্সে কথা বললে তাদের যেন ডিভাইসটি স্থাপন করতে দেয়া হয়। গত তিনদিন আগেও আবু আহাদ মিয়া তাদেরকে একই কথা বলেছেন বলে জানান এই শিক্ষক নেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে ইউনিক আইটির লোকজন ফরিদপুর শহর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশ কয়েকটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের দোহাই দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে স্কুলগুলোকে তাদের সরবরাহ করা ডিভাইসটির স্থাপনে বাধ্য করেছেন।
সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) এম এ নাঈমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দিয়ে স্কুলগুলোতে এ ডিভাইসগুলো বসানো হচ্ছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির পরামর্শে প্রধান শিক্ষকদের এ ডিভাইসটি কেনার জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষা কর্মকর্তারা কেন এ ক্রয় প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন তা জানতে চাইলে কথা ঘুরিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকদের বলে দেয়া হয়েছে এ দামের কমে যদি অন্য কোনো কোম্পানি একই মানসম্মত ডিভাইস সরবরাহ করতে পারে তাহলে তাদের কাছ থেকেই নিতে বলা হয়েছে।
পছন্দের কোম্পানিকে সরবরাহকারী নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রধান অভিযুক্ত ফরিদপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) আবু আহাদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এ মেশিন কেনার কথা প্রধান শিক্ষকদের, এটা আমার দায়িত্ব না। ডিভাইসটি স্থাপনের ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমিতো প্রধান শিক্ষক না, আমি কীভাবে জানবো?’
ইউনিক আইটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হারুন জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ে ৬টি স্কুলে তিনি বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন। প্রভাব খাটিয়ে স্কুল ডিভাইস স্থাপনের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা জানান, স্কুলে বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস কেনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের। উপজেলা চেয়ারম্যান বা তিনি নিজে কখনই এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
বি কে সিকদার সজল/এমএএস/এমকেএইচ