তেল বিক্রি বন্ধ দ্বিতীয় দিনে : থেমে যেতে পারে তিন বিভাগের সড়ক
১৫ দফা দাবি আদায়ে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা দেশের এই তিন বিভাগের সব জেলায় এবং বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েক জেলায় আজ (২ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট (কর্মবিরতি)। এ কারণে আজও বন্ধ রয়েছে ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহন। সেই সঙ্গে এসব জেলার সব পেট্রলপাম্পে ডিজেল, অকটেন ও পেট্রল বিক্রি।
এদিকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের ফলে প্রথম দিনে রোববার যানচলাচলে তেমন প্রভাব না পড়লেও আজ (সোমবার) থেকে প্রায় অচল হয়ে যেতে পারে তিন বিভাগের সড়কপথ। সেই সঙ্গে বিপর্যস্ত হবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। তেল উত্তোলন করতে না পারায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সব ধরনের পরিবহন চালকরা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আজও ট্যাংকলরিগুলোকে ডিপো ও বিভিন্ন পেট্রলপাম্পের সামনে অলসভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে তিন বিভাগে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। এতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ছাড়াও কৃষিজমিতেও পানি সেচ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পেট্রলপাম্প বন্ধের সুযোগে অতিরিক্ত দামে খোলা তেল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
যদিও ধর্মঘটের কারণে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ। তিনি জানান, বেশিরভাগ বাস ঢাকা থেকে তেল নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসতে পারে। তবে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁওয়ের মতো বেশি দূরত্বের দু-একটি গন্তব্যে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ১৫ দফা দাবি পূরণে সরকারকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা দাবি না মানায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ধর্মঘট শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক অমীমাংসিত দাবিসমূহ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা টালবাহানা করছে। বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। ফিলিং স্টেশন তথা জ্বালানি ব্যবসায়ীদের ওপর অযথা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন দফতর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিধান। যা মেনে নিয়ে জ্বালানি ব্যবসা আদৌ সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খুলনা বিভাগের সব জেলায় এবং বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয় খুলনার দৌলতপুর ডিপো থেকে। আর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে তেল সরবরাহ করা হয় সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপো থেকে। ধর্মঘটের কারণে এই দুই স্থানে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে গতকালের মতো আজও তেল উত্তোলন, বিপণন ও পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ডিলার ডিস্ট্রিবিউটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-মহাসচিব ও খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, জ্বালানি তেল বিক্রির প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে সাত শতাংশ প্রদান, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিষয়টি সুনির্দিষ্টকরণ, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমা প্রথা প্রণয়ন, ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রলপাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রলপাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রলপাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট, জেনারেল স্ট্রোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রলপাম্পের প্রবেশদ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতীত অন্য দফতর বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লাইসেন্স গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল, বিএসটিআই কর্তৃক আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলক ক্যালিব্রেশনের সিদ্ধান্ত বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, সুনির্দিষ্ট দফতর ব্যতীত সরকারি অন্যান্য দাফতরিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ডিলার বা এজেন্টদেরকে অযথা হয়রানি বন্ধ, নতুন কোনো পেট্রলপাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানি তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু, পেট্রলপাম্পের পাশে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের পূর্বে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তি সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক ও বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে জোরপূর্বক পৌরসভার চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা। এই ১৫টি দাবিতে আমরা ধর্মঘট পালন করছি।
মাগুরার মেসার্স জামান দত্ত ফিলিং স্টেশনের মালিক সঞ্জয় দত্ত জানান, বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ১৫ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় খুলনা, রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের সব পাম্পে রোববার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু হয়েছে। চলমান ধর্মঘটের কারণে সাধারণ গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হলেও আমরা ব্যবসায়ীরাও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তাই ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছি।
মেহেরপুর মাম্প মালিক সমিতির সভাপতি নুর হোসেন আঙ্গুর জানান, এটি কেন্দ্রের সীদ্ধান্ত। আজ (২ ডিসেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠকে বসবেন। সেখান থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলে তেল বিক্রয় শুরু হবে।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর দুপুরে বগুড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব এবং পেট্রলপাম্প ও ট্যাংক-লরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রতন এ আলটিমেটাম দেন।
এমএমজেড/জেআইএম