‘মিডিয়া ট্রায়ালেই আমার ভাইয়ের সাজা হয়ে গেছে’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৭:২২ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

ফেনীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় করা মামলায় সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন এ রায় দেন।

ওসি মোয়াজ্জেমের বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকায়। সেখানে তার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন। রায় ঘোষণার পর ওসি মোয়াজ্জেমের ভাই খন্দকার আরিফুজ্জামান এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মিডিয়া ট্রায়ালেই আমার ভাইয়ের সাজা হয়ে গেছে। সাজানো মামলায় এ রায় দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের মামলা করার এখতিয়ারই নেই। তারপরও তার মিথ্যা ও সাজানো মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের সাজা দেয়া হয়েছে। মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হলো। ভাই ন্যায়বিচার পায়নি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আশা করছি আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাব।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এমন অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এ সময় ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করেন এবং নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছেড়ে দেয়া হয়।

OC-moazzem-house

ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছেন নুসরাত জাহান রাফি। সেই দৃশ্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। নুসরাত তার মুখ দুই হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবার ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’

মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। পরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

গত ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে (মোয়াজ্জেম হোসেন) গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ১৭ জুন আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১৭ জুলাই বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ২০ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।

মিলন রহমান/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।