ব্যাঙের ছাতার মতো গজাচ্ছে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ঝালকাঠিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে কিন্ডারগার্টেন ও কোচিং সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নেই কোনো সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রণ। নেই শিক্ষক নিয়োগের মানদণ্ড। নতুন বছর শুরুর আগেই প্রচারণার প্রতিযোগিতায় নেমেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন বছরকে টার্গেট করে শিক্ষার্থী সংগ্রহের প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছে মুদি দোকানের মতো যেখানে সেখানে স্থাপিত সব কিন্ডারগার্টেন ও কোচিং সেন্টার কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ সব মোড় ও পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে ফেস্টুন। তাতে মিথ্যা সাফল্যের উল্লেখ করে প্রতারণা ও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমান পরীক্ষা, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষার সময় কিন্ডারগার্টেন ও কোচিং সেন্টারগুলোর প্রচারণা বেড়ে যায়। প্রতি বছর অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে কিন্ডারগার্টেন ও কোচিং সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
একটি কিন্ডারগার্টেনের ফেস্টুনে দেখা গেছে সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ে শীর্ষস্থান অধিকারী হিসেবে উল্লেখ থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না দিয়ে বিভ্রান্ত-প্রতারণা করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার মান খুবই নিম্ন।
এদিকে কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থী সংগ্রহে প্রচারণার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকলেও নীরব রয়েছেন ব্যাচে পড়ানো শিক্ষকরা। কারণ সরকারি নীতিমালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য তারা এ সময়ে নীরব থাকলেও নতুন বছরে স্কুলে ক্লাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাচে পড়ানোও শুরু করবেন। এ জন্য তারা প্রত্যক্ষ যোগাযোগে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আকর্ষণ করেন।
সরেজমিনে ঝালকাঠি শহরের সরকারি বালক বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের দেয়াল এবং বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে কোচিং সেন্টারের পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরীক্ষার শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে কোচিং সেন্টারের অভিনব বৈশিষ্ট্য সম্বলিত লিফলেট, ক্যালেন্ডার ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।
মো. সিয়াম হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই কোচিং সেন্টারের স্যাররা লিফলেট, স্কেল ও ক্যালেন্ডার দিয়ে থাকে। শামীমা খাতুন নামে এক অভিভাবক বলেন, নগরীতে এমন কোনো সড়ক ও অলিগলি নেই যেখানে কোচিং সেন্টারের পোস্টারের ছাপ পড়েনি। তবে স্কুলের স্যাররা এখনও নীরব রয়েছেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের এক কোচিং সেন্টারের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অভিভাবকরা স্কুল ছুটির পরই ছেলে-মেয়েদের কোচিং করাতে আগ্রহী থাকেন। তবে স্থানীয় প্রশাসনের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, কোথাও একাডেমিক কোচিংয়ের পোস্টার নয়, লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন ফাইনাল কোচিংয়ের পোস্টার। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিয়ম মেনে চলা হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জানুয়ারি মাস থেকে যথানিয়মে অভিযান চালানো হবে। স্কুল চলাকালীন সময়ে কোনো কোচিং সেন্টার চলতে দেয়া হবে না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, সরকারিভাবে এক সময়ে কিন্ডারগার্টেন রেজিস্ট্রেশনের কথা উঠেছিল। সে সময় কিছু কিছু শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদনও করেছিল। কিন্তু পরে আর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়নি। তাই কিন্ডারগার্টেন নিয়ন্ত্রণ বা তদারকির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। এ সুযোগে মুদি দোকানের মতোই যার যেভাবে খুশি, শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন।
মো. আতিকুর রহমান/এমএমজেড/জেআইএম