স্টিলের হদিস নেই!
দেশে ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে টাঙ্গাইলেই দুটি। এর একটি হচ্ছে নাগরপুরে আর একটি কালিহাতী উপজেলায়। ইতোমধ্যে দেড় একর জমির ওপর নাগরপুরের সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাধলাপাড়া গ্রামে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। পাইল না করেই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে চারতলা বিশিষ্ট প্রিন্সিপাল ডরমেটরি ও তিনতলা বিশিষ্ট ফিমেল ডরমেটরি ভবন নির্মাণের কাজ। এসব কাজের বাফারিংয়ে স্টিলের পরিবর্তে বাঁশ আর কাঠের সাটারিং (কংক্রিটের ঢালাইয়ের জন্য ব্যবহৃত অস্থায়ী কাঠামো) ব্যবহার করা হচ্ছে। একই প্রদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়েছে কলাম, বিম আর গ্রেড বিম।
অন্যদিকে জমি সংকটের ফলে কালিহাতী উপজেলায় বরাদ্দকৃত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। তবে সম্প্রতি উপজেলার বাঘুটিয়ায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দেড় একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দেয়া এক নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন (দ্বিতীয় খসড়া) থেকে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিটিতে ছয়তলা পাইল ভিতের ওপর পাঁচতলা একাডেমিক ভবন, ছয়তলা পাইল ভিতের ওপর তিনতলা ডরমেটরি ভবন, ছয়তলা পাইল ভিতের ওপর চারতলা ভবন (প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার ও নারী পরিদর্শকদের জন্য ডরমেটরি), পাম্প হাউজ, সাব-স্টেশন, গ্যারেজ, ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণাগার, ডিপ টিউবওয়েল, কম্পাউন্ড ড্রেন, বাউন্ডারি ওয়াল, অ্যাপ্রোচ রোড, গার্ড শেড ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ করার নির্দেশনা রয়েছে।
তবে টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৪ মাস সময়সীমা নির্ধারণ করে ২০১৮ সালে ২০ জুন নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ১৭ কোটি সাড়ে ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে এ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন চুক্তি করে ময়মনসিংহের ভাওয়াল কন্সট্রাকশন লিমিটেড। এ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে ছয়তলা পাইল ভিতের ওপর চারতলা একাডেমিক ভবন ছাড়া ছয়তলা পাইল ব্যতীত তিনতলা ডরমেটরি ভবন, চারতলা ডরমেটরি ভবন (প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার ও নারী পরিদর্শকদের জন্য ডরমেটরি), পাম্প হাউজ, সাব-স্টেশন, গ্যারেজ, ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণাগার, ডিপ টিউবওয়েল, কম্পাউন্ড ড্রেন, অ্যাপ্রোচ রোড এবং গার্ড শেড ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণের নির্দেশনা রয়েছে। তবে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ কার্যাদেশে হচ্ছে না বাউন্ডারি ওয়ালের নির্মাণ কাজ।
প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, ভবন নির্মাণের চলছে চুক্তি অমান্য করার প্রতিযোগিতা। ভবন নির্মাণের বাফারিং বা মাটির নিচে কলাম তৈরিতে বাঁশ আর কাঠের সর্বোচ্চ ব্যবহার হলেও পাওয়া গেছে নাম সর্বশ্য স্টিল সিটের ব্যবহার। এ প্রকল্পে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করছেন ৫০ জন শ্রমিক। চলছে একাডেমিক ভবন নির্মাণের মাটি উত্তোলন আর সরানোর কাজ। এছাড়াও প্রকল্প এলাকায় রয়েছে নানা শ্রেণির রড ও নিম্নমানের ইট আর পাথরের স্তুপ।
নাম প্রকাশ না শর্তে প্রকল্পে কর্মরত একাধিক নির্মাণ শ্রমিক জানান, গণপূর্তের কতিপয় কর্মকর্তার (ঢাকা ও টাঙ্গাইলে কর্মরত) স্বজনপ্রীতি আর উৎকোচ গ্রহণের ফলে কাজে চলছে অনেকটাই অনিয়ম। এর প্রকল্প নির্ধারিত কাজের বিপরীতে মাটির নিচের কলাম বাফারিং আর সাটারিং ঢালাইয়ে ৪টি পাথর, ৩টি বালু আর ১টা সিমেন্ট নির্ধারণ করা থাকলেও এখানে ব্যবহার হয়েছে ১টি সিমেন্ট, ৩টি বালু আর ৫টি পাথর।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইড প্রকৌশলী সাকিব হাসান বাফারিংয়ে স্টিলের পরিবর্তে বাঁশ আর কাঠের সাটারিং ব্যবহার করার কথা স্বীকার করে জানান, পাঁচটি পাথর, তিনটি বালু আর একটি সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই দেয়া হচ্ছে। সেন্টারিংয়ে ব্যবহার হচ্ছে স্টিল সার্টার, প্লেনসিট, কাঠ, বাঁশ আর পলিথিন। এছাড়া দেয়াল নির্মাণে ১০/৫ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দেয়া হচ্ছে।
টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হাসমত আলী জানান, নাগরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে পাইল নির্ধারণ করা হয়নি। প্রকল্পের নির্ধারিত পাম্প হাউজ, সাব-স্টেশন, গ্যারেজ, ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণাগার, ডিপ টিউবওয়েল, কম্পাউন্ড ড্রেন, অ্যাপ্রোচ রোড এবং গার্ড শেড ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণের নির্দেশনা মোতাবেকই চলছে। তবে এ প্রকল্পের বাউন্ডারি ওয়াল বাবদ নির্ধারিত ৪২ লাখ টাকার স্থলে দেড় কোটি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ কার্যাদেশের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ হচ্ছে না।
তিনিও এ প্রকল্পের ভবন নির্মাণে মাটির নিচের বাফারিংয়ে স্টিল সিটের পাশাপাশি বাঁশ আর কাঠের সাটারিং ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। এছাড়া সব কাজ নিয়মতান্ত্রিকভাবে মানসম্মত ইট, পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আবদুল্লাহ নূরের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরিফ উর রহমান টগর/এমবিআর/এমকেএইচ