স্নাতক পাস না করেও সরকারি কর্মকর্তা, ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:৩৯ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৯
অভিযুক্ত মো. রেজাউল করিম

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী (সাময়িক বরখাস্তকৃত) মো. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ৭৮ লাখ ৪ হাজার ১৩০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তার কাছ থেকে আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরত নেয়ার পাশাপাশি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর আগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বেশ কিছুদিন কারাগারে ছিলেন রেজাউল করিম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন মো. রেজাউল করিম। চাকরি নেয়ার প্রায় ১৭ বছর পর চাঁদপুর জেলার মতলব থানার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের আবু বকর সিদ্দীকের ছেলে রেজাউল করিমের সার্টিফিকেট না দিয়ে চাকরি নেয়ার বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। প্রতারণা করে মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদে উচ্চমান সহকারী পদে চাকরি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২ এর উপসহকারী পরিচালক ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন।

মুন্সীগঞ্জে দুদকের আইনজীবী মো. আশরাফ-উল-ইসলাম জানান, এ ঘটনায় রেজাউল করিম ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে গেলে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও কৃঞ্চ দেবনাথের বেঞ্চ তাকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়ে মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। এরপর ১৯ শে ফেব্রুয়ারি আদালতে জামিনের আবেদন করলে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. শওকত আলী চৌধুরী তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে মুন্সীগঞ্জে উচ্চমান সহকারীর পাঁচজনের শূন্য পদে লোক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। স্থানীয় সরকার জেলা পরিষদ কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ১৯৯০ -তে উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক পাস উল্লেখ ছিল। কিন্তু রেজাউল করিম নিজেকে স্নাতক পাস উল্লেখ করে উচ্চমান সহকারী পদে আবেদন করেন।, মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ কর্তৃক রেজাউল করিমকে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয় এবং ২০০১ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর রেজাউল করিম মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদে উচ্চমান সহকারী পদে যোগদান করেন।

যোগদানের ২৪ দিনের মাথায় একই বছরের ২৪ অক্টোবর রেজাউল করিম বদলি হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদে যোগদান করেন। দুদকের তদন্তকালে রেজাউল করিমের ব্যক্তিগত নথি মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানকালে রেজাউল করিমের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র সরবরাহ করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয় এবং জেলা পরিষদ দুদককে জানায়, রেজাউল করিম তার স্নাতক পাসের সনদপত্র জমা প্রদানের জন্য ১৫ দিনের লিখিত সময়ের আবেদন করেও দিতে পারেননি।

দুদক আরও জানায়, চাকরিতে আবেদন ও যোগদানের যোগ্য না থাকা সত্ত্বেও এবং স্নাতক পাস না হয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে জেনে বুঝে চাকরিতে যোগদানের পর প্রতারণা ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি ২১ লাখ ২০ হাজার ৯৮০ টাকা বেতনভাতা গ্রহণ করে আত্মসাত করেছে।

এদিকে দুদকের ওই মামলার পরে স্থানীয় সরকার বিভাগও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ওই তদন্তে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। পরে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ৭৮ লাখ ৪ হাজার ১৩০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ অধিশাখার উপ সচিব ড. জুলিয়া মঈন এক চিঠিতে রেজাউল করিমের আত্মসাতকৃত ৭৮ লাখ ৪ হাজার ১৩০ টাকা দ্রুত ফেরত নেয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুব্রত পাল বলেন, রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র তৈরি করা হচ্ছে এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি ইতোপূর্বে আত্মসাতকৃত ২০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। বাকি টাকা ফেরত দেয়ার জন্য তিনি কিছু দিন সময় চেয়েছেন। আমরা লোপাটকৃত অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

শাহাদাত হোসেন/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।