‘ধান কেনার অ্যাপ’ কী জিনিস বোঝে না কৃষক
>> ২০ নভেম্বর থেকে ধান, ১ ডিসেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ
>> কেজি ২৬ টাকায় ৬ লাখ টন আমন ধান কিনবে সরকার
>> ৩৬ টাকা দরে সাড়ে তিন লাখ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত
>> ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন, আবেদন শেষ ১৫ ডিসেম্বর
চলতি আমন মৌসুমে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষকের কাছ থেকে আমন ধান কিনবে সরকার। ‘কৃষকের অ্যাপ’ এর মাধ্যমে দেশের আট বিভাগের ১৬ উপজেলায় ধান সংগ্রহ করা হবে।
এরই অংশ হিসেবে যশোর সদর উপজেলা থেকে অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। চলতি আমন মৌসুমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ১৬ জেলা থেকে এসব ধান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যশোর সদর উপজেলাও রয়েছে এই তালিকায়। এখানে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন। তবে অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা নিয়ে কৃষকের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে। ‘ধান কেনার অ্যাপ’ কী জিনিস বোঝে না কৃষক।
যশোর খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে যশোর জেলায় মোট ১৫ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলা থেকে ২ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. লিয়াকত আলী বলেন, যশোর সদর উপজেলার ২ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে অ্যাপের মাধ্যমে কেনা হবে। এজন্য ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করে কৃষি বিভাগ যাচাই-বাছাই ও কৃষকদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করবে। এরপর নির্ধারিত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ন্যায্যমূল্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য এবার পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। আমন মৌসুমে যশোর সদরসহ ১৬টি জেলায় অ্যাপের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কৃষককে প্রথমে স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে গুগল প্লে-স্টোরের মাধ্যমে ‘কৃষকের অ্যাপে’ নিবন্ধন করে আবেদন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন পড়বে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোন নম্বর।
তিনি বলেন, আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া চলবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কৃষি বিভাগ আবেদন যাচাই-বাছাই করে অটোমেটিক পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে কৃষক চূড়ান্ত করবে। কৃষকরা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যকেন্দ্র বা যেকোনো স্থান থেকেই অনলাইনের মাধ্যমে এ নিবন্ধন ও আবেদন করতে পারবে। এজন্য ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যকেন্দ্রগুলোকে নির্দেশনা প্রদান ও উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
তবে প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনার উদ্যোগ নেয়ায় অনেক কৃষকেরই এ বিষয়ে ধারণা নেই। যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর এলাকার কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছি। এবার সরকার মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ধান কিনবে এমন কিছু তো শুনিনি। অ্যাপে ধান কিনবে মানে কি?।
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ছাতিয়ানতলা এলাকার কৃষক কবির সরদার বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছি। স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে জেনেছি এবার সরকার মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ধান কিনবে। কিন্তু এর আগে এই অ্যাপ সম্পর্কে কোনোদিন কিছু শুনিনি আমি। এমনকি এই অ্যাপ কী জিনিস তা আমি জানি না। কিভাবে আবেদন করতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা নেই আমার।
যশোর সদরের খোলাডাঙ্গা এলাকার কৃষক মশিয়ার রহমান দুই বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, সরকারি পর্যায়ে অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই জানি না আমি। ধান কেনার কথাও শুনিনি।
যশোর সদরের মাহিদিয়া গ্রামের আরিফ হাসান বলেন, চার বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছি। আমার স্মার্টফোন আছে। নিজের ফোন থেকে সরকারকে ধান সরবরাহের জন্য আবেদন করেছি। আমার ফোন থেকে আরও ১০ জন কৃষকও আবেদন করেছেন।
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া-মাহিদিয়া এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনার বিষয়টি কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও কৃষক প্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। কৃষকদের কাছে কাছে গিয়ে জানানো হচ্ছে বিষয়টি। ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রকৃত কৃষকরা যাতে নিবন্ধন করে আমন ধান সরবরাহ করতে পারেন সেজন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কৃষকদের অ্যাপ সম্পর্কে ধারণা কম বিষয়টি স্বীকার করে রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, এটিই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। কারণ এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ধান সংগ্রহে প্রভাবশালীদের চাপ কমবে। প্রকৃত কৃষকরা ধান সরবরাহ করতে পারবেন। এজন্য আমরাই কৃষকদের বুঝিয়ে নিবন্ধন ও আবেদন করে দিচ্ছি, যাতে তারা ধান সরবরাহ করতে পারেন।
মিলন রহমান/এএম/জেআইএম