অনুসন্ধানে পুলিশ জানল মজা করেই ট্রেনে পাথর ছোড়ে শিশুরা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৯

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় গত এক সপ্তাহে ট্রেনের গার্ডসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ট্রেনে নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে হাফিজুর রহমান নামে এক গার্ডের। ময়মনসিংহ-সিলেটগামী একটি মালবাহী ট্রেন ভৈরব রেলস্টেশনে আসার সময় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে নরসিংদীর রায়পুরায় দৌলতকান্দি রেলস্টেশনের কাছে উপকূল ও চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের দুজন যাত্রী আহত হন। গত ৫ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ-ঢাকা রুটের এগারসিন্ধু প্রভাতী ট্রেনটি ভৈরবে আসার পথে কুলিয়ারচর রেলস্টেশন অতিক্রম করার পর পাথর ছোড়া হয়। এতেও দুজন ট্রেনযাত্রী আহত হন।

এরই মধ্যে রেলওয়ে পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, একদল শিশু-কিশোর রেললাইনের পাথর কুড়িয়ে চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে ছুড়ে মারছে। ট্রেনে পাথর ছোড়া অপরাধ হলেও ওসব শিশু-কিশোর সচেতনতার অভাবে বিষয়টি জানে না। রেললাইনের মাঠ ও খালি জায়গায় খেলাধুলার সময় মজা করে ট্রেনে পাথর ছোড়ে একদল শিশু-কিশোর।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেলপথের নরসিংদীর রায়পুরায় দৌলতকান্দি রেলস্টেশনের কাছে ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, কুলিয়ারচর এবং ভৈরব এলাকার বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পাথর নিক্ষেপে ট্রেনের যাত্রীরা আহত হলেও বিষয়টি জানে না শিশু-কিশোররা। মাঝেমধ্যে তাদের পাথর ছুড়তে দেখলেও কিছুই করার থাকে না ট্রেন যাত্রীদের। আবার ট্রেন থেকে নেমে স্টেশন মাস্টার কিংবা পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়ারও সুযোগ হয় না কারও।

এ অবস্থায় শিশু-কিশোরদের ধরা যায় না। এমনকি আইনের আওতায় আনা যায় না। আবার অনেক অভিভাবক জানেন না কার শিশু কখন কোন ট্রেনে পাথর ছোড়ে।

গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহ-সিলেটগামী একটি মালবাহী ট্রেনের গার্ড শিশুদের ছোড়া পাথরে আহত হওয়ার পর ভৈরব রেলওয়ে পুলিশের টনক নড়ে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রেলওয়ে পুলিশ রায়পুরার দৌলতকান্দি ও ভৈরবের জগন্নাথপুর এলাকায় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করে। সেই সঙ্গে এলাকার মানুষকে বোঝানো হয় ট্রেনে পাথর ছোড়া অপরাধ। মসজিদের মাইকে ঘটনাটি প্রচার করতে বলা হয়। অভিভাবকরা যেন তাদের সন্তানদের সতর্ক করে দেন। সচেতনতামূলক প্রচারণায় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. কামরুজ্জামান।

গত মঙ্গলবার দুপুরে ভৈরবের জগন্নাথপুরে ময়মনসিংহ-সিলেটগামী মালবাহী ট্রেনে শিশুরা পাথর নিক্ষেপ করলে ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) হাফিজুর রহমান গুরুতর আহত হন।

এ সময় ট্রেনটি পৌর শহরের জগন্নাথপুর এলাকা অতিক্রম করছিল। পাথরের আঘাতে পরিচালক হাফিজুরের ডান চোখে আঘাত লাগে। তারপর ট্রেনটি ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছালে বিরতি দিয়ে পরিচালককে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। চোখে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ওই দিন তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশের ওসি মো. ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা সম্প্রতি বেশি ঘটছে। মানুষের সচেতনতার অভাবে এসব ঘটনা ঘটছে। রেললাইনের পাশে খেলাধুলার সময় ট্রেনে পাথর ছুড়লে কারও চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের শাসন করা উচিত। পাথরের আঘাতে যাত্রীরা আহত ও নিহত হবেন- শিশুদের বিষয়টি বোঝানো উচিত। কারণ মজা করেই ট্রেনে পাথর ছোড়ে শিশুরা। এতে ট্রেনের পরিচালক আহত হলেও অভিযোগ করেননি। স্টেশনের মাস্টারের কাছ থেকে ঘটনা শুনে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারে নেমেছি। ভবিষ্যতে কোনো শিশু-কিশোর এমন ঘটনা ঘটালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. কামরুজ্জামান জানান, ট্রেনে পাথর ছোড়া অপরাধ। চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়লে আমাদের কিছুই করার থাকে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায়ই লিফলেট-পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণা চালায়। এরপরও মানুষ সচেতন হচ্ছে না, শিশুদের সচেতন করছে না।

আসাদুজ্জামান ফারুক/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।