দৌলতদিয়ায় আটকা চল্লিশের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ
পদ্মায় দ্রুত কমছে পানি। এতে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। এ কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ৬ নং ফেরি ঘাটের অদূরে যুবোচরে আটকা পড়েছে ৪০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যবোঝাই কার্গো জাহাজ।
প্রতি বছর নাব্য সংকটে এ সময় দিনের পর দিন পণ্যবোঝাই জাহাজ দৌলতদিয়া প্রান্তের নদীতে আটকা পড়লেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন নদীতে আটকে থেকে পরিবহন খরচ বাড়ার পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন জাহাজের মাস্টার, ড্রাইভার, সুকানি, শ্রমিকসহ অন্যান্যরা। এছাড়া তারা নির্দিষ্ট সময়ে মালামাল গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ছেড়ে আসা কার্গো জাহাজগুলো প্রতিদিন দৌলতদিয়া দিয়ে সিরাজগঞ্জের নগরবাড়ী নৌপথে সিমেন্ট, সার, কয়লা, কিলিংকার, গম, পাথরসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে চলাচল করে। কিন্তু এ রুটের দৌলতদিয়া, কাজিরহাট, বেতালিয়া, নাকালিয়া, বেড়াসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে জাহাজ চলাচল। যে কারণে ৪০টির বেশি জাহাজ দৌলতদিয়া ৬ নং ফেরি ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে নোঙ্গর করে ছোট বাল্কহেড বা ট্রলারে কিছু পণ্য খালাস করে জাহাজের ওজন কমিয়ে গন্তব্যে রওনা করছে। এ কারণে তাদের বাড়তি খরচের পাশাপাশি লাগছে অতিরিক্ত সময়। এছাড়া খাওয়া-দাওয়া, বাথরুমসহ নানা সমস্যা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ নদীতে থাকতে হচ্ছে শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের। কার্গো জাহাজগুলো চলতে নদীতে ১০ থেকে ১২ ফুট পানির প্রয়োজন হলেও বর্তমানে পদ্মার অনেক স্থানে মাত্র ৬ থেকে ৮ ফুট পানি রয়েছে। যার কারণে সেগুলো আটকে আছে।
এ সময় নদীতে এমভি সামিন, সোহেল-১, এমভি সোবহান-১, এমভি সোনিয়া-৭, এমভি প্রিন্স মেম, এমভি সনজিদ, এমভি সাদি বেঙ্গল, এমভি গোল্ডেন রোজ, এমভি কুইন অব ফিরোজা-২, এমভি মশিউর সামিয়া, এমভি নুসরাত ইসলাম, এমভি আরাফাত ময়দান, এমভি সাহারাস্তি-২, এমভি আনিকা সামিহা, এমভি ওয়াফি, এমভি খিজির তরী, এমভি প্রিন্স অব সোবহান, এমভি নাফিজ-২, এমভি আসাদ-১, এমভি আনিশা, এমভি গ্লোবালিজ-২, এমভি সামিরা গোলাপ, এমভি ওয়ারিশা আহনা, এমভি সুলতানা মান্নানসহ ৪০টির বেশি কার্গো নদীতে ভাসতে দেখা যায়। এদের বেশির ভাগই জাহাজ ৫ থেকে ৭ দিন এবং অনেক জাহাজ ১০ দিনের বেশি সময় ধরে দৌলতদিয়ায় নোঙর করে তাদের পণ্য খালাস করে ওজন কমাচ্ছে।
এমভি প্রিন্সেস মীমের মাস্টার আব্দুল হান্নান জানান, চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১১০০টন পাথর নিয়ে পাবনার নগরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে ডুবোচরের কারণে ১৫ নভেম্বর দৌলতদিয়ায় এসে আটকে পড়েছেন। এখান থেকে কমপক্ষে ১৫০ টন পাথর নামানোর পর আবার রওনা হতে পারবেন। এ জন্য তাদের কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। এতে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে মালামাল পরিবহন করতে পারছেন না, খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
দৌলতদিয়া ঘাটে শ্রমিক জোগানের দায়িত্বে থাকা মেসার্স আরিফ ট্রান্সপোর্ট কমিশন এজেন্টের ব্যবস্থাপক মনির উদ্দিন সরদার জানান, সেখানে নোঙর করা কার্গো জাহাজগুলোর পণ্য খালাসে ১৫০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছেন। অধিকাংশ শ্রমিক নগরবাড়ি থেকে এসেছেন। পণ্য খালাসে প্রতি বস্তা মাল থেকে ট্রান্সপোর্টকে ৩ টাকা করে দেয়। এর মধ্যে শ্রমিকরা পায় বস্তা প্রতি ২.৬০টাকা।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের যুগ্ম-পরিচালক আব্দুর রহিম জানান, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ি নৌপথের বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর জেগে ওঠায় সরাসরি জাহাজ যেতে পারছে না। এসব স্থানে বর্তমানের পানির গভীরতা রয়েছে ৬ থেকে ৮ ফুট। কিন্তু পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচলের জন্য কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ফুট পানি প্রয়োজন। নাব্য সংকট দূর করতে ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব দুটি ড্রেজার (খননযন্ত্র) আনা হয়েছে। দ্রুত খনন কাজ শুরু হবে।
রুবেলুর রহমান/এমএমজেড/পিআর