ভিক্ষুক পুনর্বাসনে ‘আস্থা’
ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে ব্যক্তিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে নওগাঁ সদর উপজেলা প্রশাসন। ভিক্ষুক পুনর্বাসনে ‘আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পে’ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম থেকে ৪৯ জন ভিক্ষুক নিয়ে একটি সমিতি গঠন করা হয়েছে।
তাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে সদর উপজেলা পরিষদের সামনের বাজারে মানসম্মত মাংসের দোকান ‘আস্থা’ চালু করা হয়েছে। দোকানের আয় থেকে ৪৯ জন ভিক্ষুককে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
গত ২০ দিন আগে দোকানে মাংস বিক্রির কার্যক্রম শুরু হলেও বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি চালু করা হয়েছে। নওগাঁ সদর আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন দোকাটির উদ্বোধন করেন। দোকানটিতে প্রতিদিন একটি গরু ও একটি ছাগল জবাই করা হয়। দাম স্বাভাবিক হওয়ায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখান থেকে মাংস কিনছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি খাবার হোটেল স্থানীয়ভাবে এ দোকান থেকে মাংস নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
তবে দোকানটি চালু করার কয়েক মাস আগে থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা এবং সবাইকে মাংস কেনার জন্য অনুরোধ করা হয়। স্বাস্থ্যসম্মত এ দোকান চালুর পর বেশ সাড়া পড়েছে।
শিকারপুর ইউনিয়নের বিলভবানিপুর গ্রামের বিধবা ময়না জানান, গত তিন বছর আগে তার স্বামী আহাদ আলী অসুস্থতায় মারা গেছেন। কোনো সন্তান নেই। থাকেন অন্যের জমিতে টিনের ঘরে। এর আগে স্বামীকে নিয়ে শহরে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। নদীতে মাছ ধরে তাদের জীবন চলত। স্বামী মারা যাওয়ার পর গ্রামে ফিরে যান। আয়ের কোনো উৎস না থাকায় ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সপ্তাহে তিন-চারদিন ভিক্ষা করেন। এতে তিন-চার কেজি চাল ও ১০০-১৫০ টাকা পান। কখনো অসুস্থ হলে বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না। স্থানীয় ইউপি মেম্বার ভিক্ষুক পুনর্বাসনের তালিকায় তার নাম দিয়েছেন।
একই গ্রামের বিধবা মাজেদা বেগম জানান, গত পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলে মাছ ধরে কষ্ট করে সংসার চালায়। ছোট ছেলের সঙ্গে থাকেন। ভিক্ষা করে কিছুটা সহযোগিতা করেন। ভিক্ষুক পুনর্বাসন তালিকায় তার নাম দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যদি পুনর্বাসন থেকে সহযোগিতা পাই তাহলে আর ভিক্ষা করবো না। মানুষের কাছে হাত পাততে লজ্জা লাগে।
‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মনোয়ার হোসেন ও ফিল্ড সুপার ভাইজার রুজিনা আক্তার বলেন, ৪৯ জন ভিক্ষুক নিয়ে একটি সমিতি গঠন করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে এবং সরকার দিয়েছে ২০০ টাকা। মোট ৪০০ টাকা দিয়ে ভিক্ষুক ফান্ড গঠন করা হয়েছে। সঞ্চয়ের টাকা থেকে গরু ও ছাগল কিনে দোকান থেকে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। লভ্যাংশ থেকে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শহরে কোয়ালিটি সম্পূর্ণ কোনো মাংসের দোকান না থাকায় যত্রতত্র বিক্রি করা হয়। কীভাবে মানসম্পন্ন মাংস সরবরাহ এবং ভিক্ষুকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও পুনর্বাসন করা যায় এ ধারণা থেকেই ‘আস্থা’ নামে মাংসের দোকান চালু করা হয়েছে। এখান থেকে যে লভ্যাংশ আসবে দুজন কসাইকে বেতন দেয়ার পর বাকি টাকায় ৪৯ জন ভিক্ষুকের পুনর্বাসনে ব্যয় করা হবে।
তিনি বলেন, ভিক্ষুকদের টাকার পরিবর্তে ছাগল, ভেড়া ও মুরগি দেয়া হবে। যাতে তারা নিজেরা লালন-পালন করে আর্থিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এছাড়া পৌরসভার মধ্যে ৫০ টাকার বিনিময়ে ‘হোম ডেলিভারি’ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এটি একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এখান থেকে সফলতা পেলে বাকি ইউনিয়নেও এ কার্যক্রম চালু করা হবে।
আব্বাস আলী/আরএআর/জেআইএম