ট্রেন রক্ষায় ৮ শিক্ষার্থীসহ নয়জন পেল বীরত্ব পুরস্কার
নওগাঁর রানীনগরে ট্রেন রক্ষাকারী ৮ শিক্ষার্থীসহ মোট নয়জনকে সাহসিকতা ও বীরত্ব পুরস্কার দেয়া হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর জেলা প্রশাসক ও ১৬ নভেম্বর জেলা শিশু একাডেমি তাদের পুরস্কৃত করে।
গত ১ নভেম্বর রানীনগর স্টেশন আউটারে চকের ব্রিজের আগে বড়বড়িয়া-গোনা এলাকায় রেললাইনের নিচের অংশ প্রায় দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় ছিল। বিষয়টি নজরে আসে কয়েক শিক্ষার্থীর। তাদের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস ও এর যাত্রীরা। এই ঘটনা দেশের বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসন তাদের ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ প্রেক্ষিতে গত ১১ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে তাদের এ পুরস্কার দেয়া হয়। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক, নওগাঁর পৌর মেয়র নজমুল হক সনি, রানীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল, নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুনসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া গত ১৬ নভেম্বর (শনিবার) জেলা শিশু একাডেমি মিলনায়তনেও তাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সময় জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা প্রশাসক ও শিশু একাডেমির সভাপতি হারুন-অর-রশীদ। উপস্থিত ছিলেন, সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব শিশু একাডেমির উপ-পরিচালক মুনির হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান এবং জেলা শিশু একাডেমির সদস্য ও জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কায়েস উদ্দিন।
সংবর্ধনা ও পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার পশ্চিম গোবিন্দপুর (বড়বড়িয়া) গ্রামের ৭ম শ্রেণির ছাত্র তাইম ইসলাম (১৩), ৫ম শ্রেণির ইব্রাহীম প্রান্ত (১১) ও হিমেল হোসেন(১১), ৬ষ্ঠ শ্রেণির অন্তর হালদার (১১), ৭ম শ্রেণির বিপ্লব হালদার (১৩), রানীনগর শেরে বাংলা কলেজের বাঁধন হোসেন (২১), রাজশাহী পলিটেকনিকের আরিফ হোসেন (২১), নওগাঁ সরকারি কলেজের রাকিব হোসেন (২০), বড়বড়িয়া গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন।
বাঁধন হোসেন বলেন, ফুটবল খেলা শেষ করে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ করেই রেল লাইনের ভাঙা অংশটি আমাদের মধ্যে একজনের নজরে আসে। এরপর অপেক্ষা করছিলাম কী করা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন এসে পড়ায় তাৎক্ষণিক গায়ের গেঞ্জি উড়িয়ে ও মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে ট্রেন থামানোর জন্য সংকেত দেই। ভালো কাজ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
রানীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক বুদ্ধির কারণে ট্রেনে থাকা কয়েক শত যাত্রী বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। এভাবে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তারা যে কাজ করেছে তা প্রশংসার দাবি রাখে।
জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ বলেন, দুর্ঘটনার কবল থেকে ট্রেন রক্ষা করে তারা বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। সে তুলনায় পুরস্কার যতসামান্য। ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এবং ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করতে এই শুভেচ্ছা উপহার ও সনদ দেয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতি আগামীতে তাদের আরও ভালো কাজে উৎসাহ জোগাবে। এছাড়া সমাজের অন্যরাও ভালো কাজে উৎসাহিত হবেন।
উল্লেখ্য, গত ১ নভেম্বর রানীনগর স্টেশন আউটারে চকের ব্রিজের আগে বড়বড়িয়া-গোনা এলাকায় রেললাইনের নিচের অংশ প্রায় দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় কয়েক শিক্ষার্থী মাঠে খেলা শেষ করে রেল লাইন পার হয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। এ সময় বিষয়টি তাদের নজরে আসে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা থেকে আসা একতা এক্সপ্রেস ট্রেন রানীনগর স্টেশনে ঢুকছিল। এ সময় তারা মোবাইলের লাল আলো জ্বালিয়ে নিজেদের শরীরের শার্ট, গামছা-গেঞ্জি যার কাছে যা ছিল সেটা বাঁশের কঞ্চিতে বেঁধে ট্রেন থামার জন্য সংকেত দেয়। বিষয়টি দেখতে পেয়ে চালক রেল লাইনের ভাঙা অংশ পার হবার আগেই ট্রেন থামিয়ে দেন। দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাই কয়েক শত যাত্রী।
আব্বাস আলী/এমএমজেড/এমএস