শিশু মাহিমাকে কোলে নিয়ে নার্সরাও কাঁদলো
১১ মাস বয়সী শিশু মাহিমা এখনও জানে না তার মা কোথায়? এও জানে না তার মা আর কোনো দিনও ফিরবে কীনা? মায়ের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল সে। কে জানতো এ দিনটাই হবে তার মাকে হারানোর দিন? মায়ের সঙ্গে সিলেট থেকে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে বাড়ি ফিরছিল সে। গভীর রাতে মাহিমা যখন মায়ের কোলে ঘুমিয়ে ছিল ঠিক ওই মুহূর্তে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের ট্রেনটি। সেখানেই চিরদিনের জন্য মাকে হারিয়ে ফেলে সে। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠায়।
মাথায় আঘাত পেয়েছে মাহিমা। সকাল ৮টার দিকে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আনা হলে মাথায় দুটি সেলাই দেন ডাক্তাররা। এরপর থেকে তার ঠাঁই হয় নার্সদের কোলে। কোনোভাবেই যখন মাহিমার কান্না থামাতে পারছিল না নার্সরা তখন সাহায্য নিয়েছে চকলেট ও চিপসের। এগুলো পেয়ে কিছুক্ষণ কান্না থামলেও খুঁজতে শুরু করে তার মাকে। তখনও নার্সরা জানেন না তার মা কোথায়, বেঁচে আছে কী মারা গেছে?
হঠাৎ করেই মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে শাহ আলম নামে এক যুবক হাসপাতালে এসে দাবি করে শিশু মাহিমা তার ভাতিজি। এসময় শিশুটির ফুপু আয়েশা বেগমও সঙ্গে আসেন। তারা জানান মাহিমার বাবার নাম মাঈনউদ্দিন এবং মায়ের নাম কাকলী বেগম।
ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনেই তারা চাঁদপুর থেকে ছুটে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে। পুরো হাসপাতাল খুঁজে ভাবি কাকলী বেগমকে না পেলেও একপর্যায়ে নার্সদের কোলে পান ভাতিজি মাহিমাকে। চাচাকে দেখেই কোলে চলে যায় মাহিমা। এসময় তাদের ভাবি কাকলী বেগমকে কোথাও না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
হাসপাতালের রেজিস্টার খুঁজেও শিশুটির মায়ের খোঁজ মেলেনি বলে জানান চাচা। শিশুটির চাচা শাহ আলম বার বার বলছিলেন, জীবিত বা মৃত তাকে দেখতে চাই। কি জবাব দেব তার বাবাকে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত আলী তাকে বার বার সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। একই সময় শিশুটির আম্মা আম্মা চিৎকারে হাসপাতালের নার্সসহ উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শিশুটির মায়ের খোঁজ মেলেনি। বিকেল ৩টার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে তার চাচা ও ফুপুর কাছে বুঝিয়ে দেন।
এসময় ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌল্লা খান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরুজউর রহমান অলিউরসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। পরে কাঁদতে কাঁদতে শিশুটিকে নিয়ে তার চাচা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌল্লা খান জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মুমূর্ষু রোগীদের ঢাকা-সিলেট পাঠানো হয়েছে। রোগীদের রক্তের ব্যবস্থাসহ নিহত ১৬ জনের অভিভাবকদের হাতে ২৫ হাজার করে টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া নিহতদের বিনা খরচে তাদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হন। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আসাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস/এমএস