কিন ব্রিজের নিচে রবীন্দ্রনাথের ম্যুরাল!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ১২:০৩ পিএম, ০৬ নভেম্বর ২০১৯

সিলেটে রবীন্দ্রনাথের আগমনকে স্মরণ করতে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী রবীন্দ্রনাথ স্মরণোৎসব। বিশাল বাজেট ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আয়োজন করা এই উৎসব ঘিরে বিতর্কের শেষ নেই। আয়োজক কমিটির বিতর্কিত সদস্যদের পদত্যাগ ও অপসারণের দাবিতে আন্দোলনও হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই উৎসব শুরু হওয়ার পর নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে কবিগুরুর ম্যুরাল নিয়ে। সুরমার তীর সিলেটের ঐতিহাসিক কিন ব্রীজের ঠিক নিচে বিশ্বকবির ম্যুরাল স্থাপন করা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন সংস্কৃতিকর্মী, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

অনেকেই বলছেন, মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানায় নির্মিত বিশ্ব কবির ম্যুরালে কবিকে অবমাননা করা হবে। এটা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও চিন্তা চেতনার অভাবের বহিঃপ্রকাশ। এটা সিলেটের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নষ্ট করেছে।

মঙ্গলবার বিকেলে কিন ব্রিজের নিচে কবিগুরুর ম্যুরাল উদ্বোধন করেন সিলেটে রবীন্দ্রনাথ স্মরণোৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

সংস্কৃতিকর্মী আনহার আলী বলেন, এটা সিলেটবাসীর জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। কিন ব্রিজের আশেপাশে এতো জায়গা থাকতে ব্রিজের নিচে বিশ্বকবির ম্যুরাল স্থাপন করা হল কেন আমরা বুঝতে পারছি না। এই ম্যুারালের ওপর দিয়ে ব্রিজ হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারী চলাচল করবে। এতে কবিকে চরম অবমাননা করা হবে বলে আমি মনে করি। এই বিষয়টি পুরো উৎসবকেই বিতর্কিত করে তুলেছে।

mural

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএমএ হাসান জেবুল বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির উন্মেষের কবি। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন তিনি। কিন্তু তাকে স্মরণ করতে গিয়ে উল্টো আমরা অবমাননা করছি। বারবার বিতর্কিত হচ্ছেন আয়োজকরা।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ স্মরণোৎসব অনুষ্ঠানে শুরু থেকেই গলদ। যারা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে চর্চা করে তাদেরকে নিয়ে এটা আয়োজন করা উচিত ছিল। কিন্তু এই বিষয়টি হয়ে গেছে পুরো উল্টো। আমরা যারা রাজনীতি করি তারা পাশে থেকে সহযোগিতা না করে বরং আয়োজক কমিটিতে এসে নিজেকে প্রচার করতে ব্যস্ত। ফলে বারবার এসব ভুল হচ্ছে। আর সিলেটকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। যারা আয়োজন করেছে তারা রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করতে পারেনি বলে বুঝতে পারেনি কোথায় ম্যুরাল স্থাপন করতে হবে।

সামাজিক সংগঠন বিশ্বনাথ ডেফোডিল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. মোশাহিদ আলী নিজের ফেসবুকে অনুষ্ঠানের কয়েকটি ছবি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় লেখেন ‘রবীন্দ্রনাথ আইছিলা কেমনে দি কোন দিকে)? আর বইছিলা কিতা পুলর তলে লুকাইয়া নি? কেউ জানলে একটু কইও।

উল্লেখ্য, ১৯১৯ সালের ৫ নভেম্বর সকালে সিলেটে এসেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথমে চাঁদনিঘাট হয়ে তিনি প্রবেশ করেছিলেন সিলেট শহরে। সেদিন তাকে রেলওয়ে স্টেশনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এরপর চাঁদনিঘাটে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নেয় সিলেটের মানুষ। বিশ্বকবির সঙ্গে এসেছিলেন তার ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পুত্রবধূ। সেদিন তিনি সিলেটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সিলেটকে নাম দিয়েছিলেন শ্রীভূমি।

ছামির মাহমুদ/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।