অপহৃত যুবক ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার!
কক্সবাজারে অপহরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর নোমানুল হক সাজিম (২৮) নামে অপহৃত এক যুবককে ডিবি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে অপহরণকারীরা। তবে পুলিশ অপহরণকারীদের না ধরে ওই যুবককে গ্রেফতার দেখিয়ে মানবপাচার মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে।
কক্সবাজারের পর্যটন জোন কলাতলীর সৈকত পাড়ার নিজ বাসা থেকে সাজিমকে গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অপহরণের ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার বিকেলে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানায় পুলিশ।
অপহরণ ও পরবর্তীতে গ্রেফতার হওয়া নোমানুল হক সাজিম কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কলাতলীর সৈকত পাড়ার হাফেজ জমিরুল কাদের ও জুবায়দা ইয়াছমিনের একমাত্র ছেলে।
কক্সবাজার ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া জানান, নোমানুল হক সাজিমের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলার তথ্য পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে দেখা যায়, অধিকাংশ মামলাই জমি-সংক্রান্ত। সেসবের একাধিক মামলায় খালাস ও জামিনে রয়েছেন সাজিম। কিন্তু তার বিরুদ্ধে হোটেলে পতিতা ব্যবসা করার অভিযোগে আরেকটি মামলা পাওয়া যায়। যা মানবপাচারের অভিযোগে করা। পুলিশ পরিদর্শক আতিক উল্লাহ তদন্তাধীন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় কলাতলীর কাজী রাসেল কর্তৃক অপহৃত সাজিম ডিবি পুলিশের কাছে কীভাবে এলো এমন প্রশ্নের উত্তরে মানস বড়ুয়া বলেন, তাকে কেউ অপহরণ করেনি, এটি মিথ্যাচার। তবে ভিডিওর বিষয়টি নজরে আনা হলে তিনি আর কোনো কথা বলতে চাননি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে কাজী রাসেলের নেতৃত্বে ৫ জন সাজিমের বাসায় ঢুকেন। ৬টা ৫৯ মিনিটে সাজিমকে জামার কলার ধরে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন কাজী রাসেল। পেছনে রয়েছেন অন্যরা।
অপহৃত নোমানুল হক সাজিমের মা জুবায়দা ইয়াসমিন (৪৫) জানান, পর্যটন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গডফাদার চাঁদাবাজ কাজী রাসেল উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় অন্যদের মতো আমাদের কাছ থেকেও নির্বাচনী খরচ হিসেবে ২ লাখ টাকা দাবি করেছিল। আমরা সেসময় টাকা দেয়নি। এরপর থেকেই আমার ছেলের পেছনে লেগে আছে রাসেল। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সন্ধ্যায় কোনো কারণ ছাড়াই ফিল্মি স্টাইলে আমার ছেলেকে নিজ বাসা থেকে অপহরণ করে। দ্রুত গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেলে আমরা নিরুপায় হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় যাই এবং অপহৃত ছেলেকে উদ্ধারে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করি।
পুলিশ লিখিত অভিযোগ নিয়েও দুই ঘণ্টা ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স না পাঠিয়ে কালক্ষেপণ করে। ছেলেকে হত্যা করা হতে পারে ভয়ে আমাদের সিসিটিভি ফুটেজে উঠে আসা কাজী রাসেলদের দুর্বৃত্তপণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড দেই। এর ঘণ্টা দুয়েক পর আমাদের ফোন করে জানানো হয় সাজিম ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে কাজী নোবেল আহমেদ রাসেল তার বিরুদ্ধে আনিত অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমি পুলিশকে সহযোগিতা করেছি মাত্র।
সাজিমকে অপহরণ ও গ্রেফতারের বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, সাজিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে আমরা স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়েছি।
চাঁদাবাজির বিষয় নিয়ে কাজী রাসেলের সঙ্গে সাজিমদের পরিবারের উপজেলা নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সাজিমকে গ্রেফতারে তাকে কেন ব্যবহার করা হলো? এমন প্রশ্নে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, কাজী রাসেলের এ বিষয়টা সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম