অধ্যক্ষকে তুলে নিয়ে গভীর পুকুরে ফেলে দিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা
ক্লাসে উপস্থিতি কম থাকায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দুই ছাত্রলীগ কর্মীর ফরম পূরণ হয়নি। তাদের ফরম পূরণের আবদার না মানায় অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে লাঞ্ছিত করে পুকুরে ফেলে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
শনিবার দুপুরের পর শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কম্পিউটার বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় যোহরের নামাজ পরে পুকুরপাড় দিয়ে নিজ দপ্তরে ফিরছিলেন অধ্যক্ষ। এই ঘটনায় নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা দায়ের করেছেন ওই অধ্যক্ষ। শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মামলাটি দায়ের করা হয়। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫০ জনকে। তবে এজারাহারে কারও নাম উল্লেখ নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী অধ্যক্ষের পথরোধ করেন। তারা অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করেন। পরে তুলে নিয়ে গিয়ে তারা তাকে পাশের পুকুরে ফেলে দেন।
সাঁতার জানায় গভীর পুকুর থেকে উঠে আসেন অধ্যক্ষ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্যাম্পাস ছেড়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল ঘুরে গেছে।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, বিভিন্ন সময় অন্যায় আবদার নিয়ে তার কাছে আসতো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। কিন্তু তাদের দাবিগুলো মানা হয়নি। এ নিয়ে তারা ক্ষুদ্ধ ছিল। সর্বশেষ শনিবার ক্লাসে উপস্থিতি কম থাকায় ফরম পূরণে ব্যর্থ দুই ছাত্রের ফরম পূরণের দাবি নিয়ে এসেছিল কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
পরে তিনি ওই বিভাগের প্রধানের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সেটি মনমতো হয়নি তাদের। তার সামনেই গালাগালি শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তিনিও এর প্রতিবাদ করেন। দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে দপ্তর ছেড়ে যায় তারা।
অধ্যক্ষে আরও বলেন, তিনি যোহরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে নিজ দপ্তরে ফিরছিলেন। এসময় পথরোধ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। ১২ থেকে ১৫ ফুট গভীর পুকুর থেকে কোনোরকমে সাঁতরে পাড়ে ফেরেন তিনি। এ নিয়ে আইনত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান অধ্যক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্ররা জানান, ছাত্রলীগ নেতা কামাল হোসেন সৌরভ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়ের করে আসছে তারা। নানান অপকর্মে জড়িয়েও পড়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা কামাল হোসেন সৌরভের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেন বলেন, অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের ছেলেরা জড়িত কি না তা তিনি নিশ্চিত নয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গোলাম মোস্তাফা বলেন, এ ঘটনায় রাতে থানায় মামলা দায়ের করেছেন অধ্যক্ষ। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫০ জনকে। তবে এজারাহারে কারও নাম উল্লেখ নেই।
ওসি আরও বলেন, ক্যাম্পাস থেকে সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আসামিদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ নিয়ে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে জানান ওসি।
খবর পেয়ে পলিটেকনিকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সিসিটিভির ভিডিও ধরে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ফেরদৌস/এমএএস/জেআইএম