কোলের সন্তানকে শিকলে বেঁধে কাজে যান মা
কখনও প্রখর রোদ, কখনও বৃষ্টি আবার কখনও ঠান্ডা। ক্ষুধায় কাতর হলেও কিছুক্ষণ কান্নার পর থেমে যায় কিংবা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। ভাগ্যের নির্মমতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে শিশুটি। শিকলে বাঁধা তার ছোট্ট জীবন। নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় নদী বন্দরের (টার্মিনাল) চলাচলের জেটির পাশে শিকল দিয়ে বাঁধা ওই শিশুর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়।
সেখানে গিয়ে জানা যায়, দেড়-দু’বছরের এই কন্যা সন্তানকে তার মা শিকল দিয়ে বেঁধে কাজে চলে গেছেন। মূলত সন্তান যেন হারিয়ে না যায় বা কোথাও না যায় সে জন্য মা এ কাজ করেছেন। অনেকেই শিশুটিকে খাবার দেন। আবার অনেকেই রোদ-বৃষ্টিতে তাকে ছাতা দেন, পানি দেন।
শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য দুপুরের পর থেকে সেখানে থাকলেও বিকেলে হঠাৎ করেই দেখা যায় শিশুটি সেখানে নেই। সেখানে অবস্থানরত আব্দুল হামিদ প্রধান নামে একজনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, একটু আগেই একজন মধ্য বয়সী নারী তালা খুলে শিশুটিকে নিয়ে গেছেন। চাবি দিয়ে তালা খুলে নিয়ে যাওয়ায় মনে হয়েছে শিশুটি ওই নারীর।
লঞ্চঘাটের অস্থায়ী কয়েকজন দোকানদার জানান, শিশুটি যেন হারিয়ে না যায় বা কোথাও না যায় সেজন্যই তার মা এ কাজ করেছেন। আবার অনেকে ভিক্ষা করতে বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে আসেন তখন তাদের সন্তানকেও এখানে বেঁধে রেখে যান।
লঞ্চঘাটের ঝালমুড়ি বিক্রেতা ইমরুল হাসান জানান, লঞ্চঘাটে এমন দৃশ্য তিনি মাঝে মাঝেই দেখেন। অনেক সময় শিশুটি সকাল-রাত পর্যন্ত এভাবেই বাঁধা থাকে। তাকে এখানে বেঁধে রেখে কাজ শেষে যাওয়ার সময় তার মা নিয়ে যান।
এদিকে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত ছবি নজরে আসে পুলিশের। বিকেলে পুলিশ লঞ্চঘাট গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় শিশুটির মাকেও সন্তানসহ পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, নারায়ণগঞ্জের লঞ্চ টার্মিনাল ঘাটে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা শিশুটি ও তার মাকে উদ্ধার করার পর গাজীপুরের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে (সেফহোম) পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উদ্ধার করার পর শিশুটির মা জানান, তার নাম শ্রীদেবী এবং সন্তানটি তার। যদিও তার বাবা কে সেটি তিনি জানাতে পারেননি। ওই নারীর কথাবার্তাও কিছুটা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিল। নিজের সন্তানটি মেয়ে জানিয়ে একেক সময় তার একেক নাম বলেন তিনি। নিজে মাজারে ঘোরেন ও এদিক-সেদিক কাজ করে টাকা কামান আর সেই কাজে যাওয়ার সময় সন্তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন বলেন জানান শ্রীদেবী।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ওই শিশু ও তার মাকে উদ্ধার করি। ওই নারীর কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় এবং কোনো নাম-ঠিকানা না বলতে পারায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাকে গাজীপুরের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে।
শাহাদাত হোসেন/আরএআর/এমএস