টানা বর্ষণে ডুবে গেছে দিনাজপুরের আলু চাষিদের স্বপ্ন
দিনাজপুরে দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে আলু চাষিদের স্বপ্ন ডুবে গেছে। অনেক কৃষক আলুর বীজগুলোকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে জমি থেকে তুলে রাখছেন। চাষিরা বলছেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যে যারা আলুর বীজ রোপণ করেছিলেন, তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
বিরামপুর উপজেলার আলও চাষি আবুল হোসেন ও হাসান আলী। গত শুক্রবার বিকেলে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও ছাতা মাথায় ডুবে যাওয়া ক্ষেত থেকে আলু তুলছিলেন। কথা হয় তাদের সঙ্গে।
তারা বলেন, গত বুধবার সকালে নিজ জমিতে রোপণ করা আলু শুক্রবার বিকেলেই তুলছেন। শুধু তাই নয়, পাশের জমিতে স্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়ে ছানাউল হকও তার জমি থেকে আলু তুলে গামলায় রাখছেন।
জমিতে গিয়ে কথা হলো আলু চাষী আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিবছর আলুর মৌসুমে অধিক লাভ পাবার আশায় আমরা এ এলাকার আলু চাষিরা আগাম জাতের আলুর বীজ লাগাই। গত বুধবার সকালে ৪০ শতক জমিতে রোমানা জাতের হাইব্রিড আলুর বীজ লাগিয়েছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে টানা বৃষ্টির কারণে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আজ জমি থেকে আলুর বীজগুলো তুলতে না পারলে আলুগুলো সব পচে নষ্ট হয়ে যাবে।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার উপজেলায় প্রায় ১৫শ হেক্টর আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে আলুর বীজ রোপণ করা হয়েছে।
মাধবপাড়া গ্রামের আলু চাীষদের দেয়া তথ্যমতে, এ গ্রামের প্রায় ২০জন চাীষর প্রত্যেকেই সর্বনিম্ন ১০ বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন। আলু চাীষদের মধ্যে হবিবর রহমান ১৪ বিঘা, তজেন উদ্দিন ১২ বিঘা, দিলদার হোসেন ১২ বিঘা, ঝকেন মালিতা ১২ বিঘা, জমশের মল্লিক ১১ বিঘা, জালাল উদ্দিন ১০ বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন। এছাড়া ওই গ্রামের রসুল মিয়া ৫ বিঘা ও বাবু মিয়া ৫ বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন।
আলু চাষি হবিবর রহমান বলেন, এবার আমি ১৪ বিঘা জমিতে ৫৬ বস্তা আলুর বীজ লাগিয়েছি। খরচ পড়েছে প্রায় ৯৮ হাজার টাকা। সার, শ্রমিক খরচ ও জমি চাষ খরচ প্রায় ৯৭ হাজার টাকাসহ সব মিলে শুধু আলু বীজ লাগাতেই ২ লাখের মতো টাকা খরচ হয়েছে। দুদিনের টানা বৃষ্টিতে আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল।
গতকাল শনিবার সকালে বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর, হাবিবপুর, প্রস্তমপুর, সারাঙ্গপুর, ভেলারপাড়া, জোত-জয়রামপুর গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেল একই দৃশ্য। মুকুন্দপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের আলু চাষী কামাল হোসেন। তিনি এবার সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিকছন চন্দ্র পাল বলেন, এ বছর উপজেলায় ১৫শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। টানা দুদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে রোপণ করা বেশকিছু জমির বীজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি নয়।
এদিকে খবর নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুরের সব উপজেলার চিত্র একই রকম। সেখানে কম-বেশি আলুর ক্ষেত তলিয়ে গেছে। সঙ্গে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নও।
এমদাদুল হক মিলন/এমএসএইচ