চৌহালীতে মধ্যরাতে ইলিশের বাজার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৯

উৎপাদন বাড়াতে ও মা ইলিশ রক্ষায় গত ৮ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে থেকে ৩০ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন দেশে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনা নদীর প্রায় ১৯ কিলোমিটার এলাকায় চলছে ইলিশ শিকার। নদী পাড়ের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধির কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না এই অবৈধ কাজ। এই মাছ বেচা-কেনার জন্য প্রায় ১২টি পয়েন্টে বিভিন্ন সময় বিশেষ করে রাতের আধারে যমুনার চরে বসছে ভ্রাম্যমাণ বাজার। রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত এসব বাজারে সবচেয়ে বেশি ইলিশ বেচাকেনা হয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ইলিশের প্রজনন মওসুমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চৌহালী উপজেলার উত্তরে সৌদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের বোয়ালকান্দি ও দক্ষিণে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পাথরাইল পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার এলাকায় অবাধে চলছে মা ইলিশ শিকার। দ্রুতগতির ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে অসাধু জেলেরা মা ইলিশ শিকার করছেন। তাদের জালে ডিমওয়ালা রূপালী ইলিশের সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকাও ধরা পড়ছে।

জানা গেছে, প্রতিটি জালে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ধরা পড়ছে প্রায় ৮ থেকে ১০ কেজি মা ইলিশ। এসব ইলিশ আকার ভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একটু কম দামে ইলিশ কেনার জন্য নিম্ন আয়ের মানুষেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এই সুযোগে স্থানীয় মাছের আড়ৎদার ও জেলেরা অর্ডার অনুযায়ী ক্রেতাদের বাড়িতে ইলিশ পৌঁছে দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন অনেকে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কতিপয় অসৎ জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে যমুনা নদীর খাষকাউলিয়া, খাষপুখুরিয়া, ঘোড়জান, উমারপুর, বাঘুটিয়া, বোয়ালকান্দি, নওহাটা, দত্তকান্দি, দক্ষিণ খাষকাউলিয়া, বিনানুই, আজিমুদ্দির মোড়, খগেন ঘাট, ভুতের মোড়, জনতা স্কুলের পশ্চিমে ও চরছলিমাবাদ এলাকায় জেলেদের মা ইলিশ ধরতে গোপনে সহায়তা করছেন।

Chowhali-2

তারা আরও জানান, এসব ইলিশ নদী পাড়ের প্রায় ১২টি পয়েন্টে বিভিন্ন সময়ে বেচাকেনা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসছেন এখানে। তারা কমদামে ডিমওয়ালা মা ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার অনেকেই ইলিশ কিনে শুধু নিজের ফ্রিজই ভরছেন না, সেই সঙ্গে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও পাঠাচ্ছেন। অপরদিকে স্থানীয় প্রশাসন প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে আটক জেলেদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল জরিমানা ও কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করছে। তাতেও থামছে না মা ইলিশ শিকার।

স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, অভিযানের খবর আগে ভাগেই জেলেদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন এক শ্রেণির দালাল চক্র। এ জন্য স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি এবং কতিপয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নৌকা প্রতি নির্ধারিত হারে উৎকোচ দিতে হয়েছে অভিযানের শুরুতেই।

এ বিষয়ে খাষপুখুরিয়ার এক জেলে জানান, তারা নির্বিঘ্নে ইলিশ ধরার জন্য একজন জনপ্রতিনিধিকে নৌকা প্রতি তিন হাজার টাকা করে দিয়েছেন। এভাবে ৫০টি নৌকা থেকে প্রায় প্রায় দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়েছেন ওই জনপ্রতিনিধি।

এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান, মৎস্য অফিসের কেউ অনৈতিক সুবিধার সঙ্গে জড়িত না। আমরা অভিযানে ব্যস্ত আছি, অন্য কেউ আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকলে আমাদের কিছু করার নেই।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ জানান, যমুনা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হচ্ছে অসাধু জেলেদের। জব্দ করা হচ্ছে কারেন্ট জাল ও মাছ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক জেলেদের করা হচ্ছে জরিমানা এবং দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড। পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে জাল। জব্দকৃত মাছ ধেয়া হচ্ছে এতিম খানায়।

তিনি বলেন, বিশাল যমুনা নদীতে একটি টিম নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য তারপরও মা ইলিশ রক্ষায় চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।