ভাঙন হুমকিতে দৌলতদিয়া ঘাট
রাজবাড়ীতে পদ্মা ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনের ভাঙনে বিলীন হয়েছে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকশ বসতবাড়ি, শতশত একর ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে দেশের দৌলতদিয়া ঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
গত ছয়দিনে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ঢল্লাপাড়া, ১নং বেপারী পাড়া, জলিল মন্ডল পাড়া এবং দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওলজানি গ্রামের কয়েকশ বিঘা ফসলি জমিসহ প্রায় ৩০০ পরিবারের ভিটে মাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২০০ পরিবার। ভাঙন আতঙ্কে আছেন আরও প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার।
এদিকে উজানের দেবগ্রামের কাওলজানি এলাকার ভাঙন দেখে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাট এলাকার লোকজনের মধ্যেও আতংক দেখা দিয়েছে। সেখানে প্রায় ৩ শতাধিক বসতবাড়ি, একটি মসজিদসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন ঢল্লাপাড়া, ১নং বেপারী পাড়া, হাতেম মেম্বর পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক পরিবার তাদের দীর্ঘদিনের ঠিকানা থেকে সহায় সম্বল গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। তাদের অনেকেই একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। ইতোমধ্যে আমজাদ শেখ, আবুল ডাক্তার, মজনু সরদার, হাসেম ফকীর, আবুল কাসেম ফকীর, মানিক শেখ, কালাম সরদার, লুৎফর সরদার, আব্দুর রশিদ সরদারের বাড়িসহ প্রায় ৩০০ বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, গত কয়েক দিনে দৌলতদিয়ার বেপারী পাড়া ও ঢল্লা পাড়ার ৭০টি, হাতেম মন্ডলের পাড়ার ৫০টি এবং দেবগ্রামের কাওয়ালজানি, মুন্সিপাড়া ১৬০টি পরিবারসহ প্রায় ৩০০ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ওইসব এলাকার কয়েক শত একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে আছে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাটও।
তারা জানান, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। অনেকেরই পরিবার পরিজন নিয়ে কোথাও থাকার জায়গা নেই। ভাঙন রোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন একবারেই ছোট হয়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে দৌলতদিয়া ঘাটেও।
দেবগ্রাম ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার বলেন, ‘কয়েক বছরে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে ইউনিয়নের অর্ধেকের বেশি নদীতে চলে গেছে। এই ইউনিয়নের প্রতি কারো কোনো নজর নেই। স্থানীয় এমপিসহ প্রশাসনের কাছে বার বার ছুটে গিয়েছি। একটিই চাওয়া ছিল- ত্রান নয়, নদী শাসন চাই। কিন্তু সে বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এ পর্যন্ত নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাই এ বিষয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যে সব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে, ঘাটের কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া ভাঙন এলাকায় কাজ চলমান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেন ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে পাউবো প্রস্তুত আছে।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, রাজবাড়ীর ৫ উপজেলার চারটিই পদ্মার পারে। এ মুহূর্তে নদীতে তীব্র স্রোত ও বিস্তৃর্ণ এলাকায় ভাঙন রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পাউবোর পক্ষ থেকে যেসব স্থানে স্কুল বা স্থাপনা আছে, সেখানে ভাঙন রোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে। রাজবাড়ীতে পদ্মা নদী ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ কারণে ভাঙনে প্রতিবছর শতশত একর ফসলি জমি, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়। তাই ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে রাজবাড়ী কে স্থায়ী ভাবে রক্ষা করা হবে।
তিনি আরও জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে প্রায় সারা বছরই সংস্কার কাজ চলে। এই মুহূর্তে তীব্র স্রোত রয়েছে, তারপরও পাউবো ডাম্পিংয়ের কাজ করছে। শুকনো মৌসুম আসলে এবং পানির লেভেল কমলে, তখন ভালভাবে কাজ করা হবে। যেন ঘাট পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
রুবেলুর রহমান/এমএমজেড/এমকেএইচ